মমেক হাসপাতালের ‘রোগী বান্ধব’ পরিচালককে সরাতে আবারো তৎপর সিন্ডিকেট!

প্রকাশিতঃ 11:33 am | April 24, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

বেশিদিন আগের কথা নয়। হঠাৎ বদলী করা হলো তাকে। তিনি চলে যেতে প্রস্তুতিও নিলেন। কিন্তু মানলো না ‘ময়মনসিংহ।’ আদতে মানেনি সেইসব মানুষ যারা নিজেদের প্রধান ও একমাত্র ভরসাস্থল সরকারি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেয়ে বিমুগ্ধ হয়েছেন। তারা আন্দোলনে নামলেন, পরিবর্তনের এক রূপকারের বদলী ঠেকাতে।

স্বত:স্ফূর্ত জনতার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল থেকে দাবি উঠলো ‘বদলী প্রত্যাহার করো, করতে হবে।’ দাবিতে একাট্টা হয়ে ঝড় উঠলো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। নড়েচড়ে বসলো হাইকমান্ড। গণদাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদ কথা বললেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কথা বললেন সরকারি দলের নেতারাও।

বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদের বদলী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গত বছরের ১৯ জুলাই চিঠিও দেন বিরোধী দলীয় নেতা। তাঁর এ উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়। প্রত্যাহার হয় বদলী। স্বপদেই বহাল থাকেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘রোগী বান্ধব’ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ।

ফাইল ফটো: পরিচালকের বদলী প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ জনতার আন্দোলন

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিনের চেনা সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে এতোদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা, অনিয়মকে ‘নির্বাসনে’ পাঠিয়ে সেবার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে রীতিমতো এক অসাধ্যকে সাধন করে জনমনে প্রশংসিত হয়েছিলেন বর্ষীয়াণ সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ভেঙে দিয়েছিলেন ঘাপটি মেরে থাকা একের পর এক সিন্ডিকেট। যেসব সিন্ডিকেটের হোতারা দিনের পর দিন নিজেদের পকেট ভারী করেছেন আর রোগী-স্বজনদের নাভিশ্বাসে ঢেঁকুর তুলেছিলেন তৃপ্তির!

তাদের এমন মহান কর্মযজ্ঞের (!) দৌলতে এবং কৌশলের করতলে পড়ে রীতিমতো এক জিম্মাদশায় থাকতে হয়েছে এ অঞ্চলের রোগী ও তাদের স্বজনদের। ফলে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন মানতে পারেনি প্রভাবশালী ওইসব সিন্ডিকেট।

তাঁরা গাঁটছড়া বেঁধে ‘রোগী দরদী’ এ মানুষটিকে বদলীর শাস্তির দন্ডই দিতে চাইলো। কোন কোন সূত্র বলে, ওই সময় পরিচালককে এখান থেকে সরাতে এক কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, স্থানীয় জনতার হৃদয়ের উষ্ণতার জোরে আবারো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনকে স্বপদে ফিরিয়ে আনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। হাসপাতালটির ক্যাপ্টেন্সির দ্বিতীয় ইনিংসে আরো বড় রকমের চমক উপহার দিয়ে স্থানীয় জনতার ভালোবাসার ‘হৃদয়মূল্য’ দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির।

ফাইল ফটো: পরিচালকের বদলী প্রত্যাহারের দাবিতে নকলা উপজেলায় মানববন্ধন

২৪ ঘন্টা হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার নতুন ‘থিউরি’ ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ উপহার দেন তিনি। পরিসংখ্যান বলছে, এ সার্ভিস চালু হবার ৬ মাসের কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ রোগী দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। হাসপাতাল পরিচালকের এমন ‘সেবাবান্ধব’ নতুন কর্মসূচি মুগ্ধ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রথিতযশা রাজনীতিক মোহাম্মদ নাসিমকে। মন্ত্রী পরিচালককে একটি প্রশংসাপত্রও দিয়েছেন। একই সঙ্গে এ মডেল দেশের অন্যসব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেও অনুসরণ করার নির্দেশ দেন।

ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধার সুফল পাচ্ছে রোগীরা। ছবি: কালের আলো

রোগীদের জন্য শতভাগ ওষুধ নিশ্চিত, উন্নত ও কাঙ্খিত সেবা, চিকিৎসকদের মানবিক আচরণ, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশও পাল্টে দিয়ে আলোড়ন তৈরি করা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদের এমন সেবার মানসিকতা এ যাত্রাতেও তুষ্ট করতে পারেনি সেইসব সিন্ডিকেটের।

এবার না কী তারা আরো ‘হৃষ্টপুষ্ট’ হয়ে বড় রকমের ফান্ড গঠন করেছেন বলেও বলাবলি হচ্ছে। আবারো শুরু হয়েছে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র। সরকারি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এ ম্যাসেজ রয়েছে। নতুন এ কুটকৌশল সম্পর্কে অবগত হয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও।

ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধার সুফল পাচ্ছে রোগীরা। ছবি: কালের আলো

সোমবার (২৩ এপ্রিল) রাতে দৈনিক কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবার পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হবে।’

স্থানীয় জনসাধারণও বলছেন, এক সময় এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার বালাই ছিল না। অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল এখানে নিয়ম। ওই সময় রোগীদের পরীক্ষা-এক্সরে, আল্ট্রা, এমআরআইসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করার জন্য বাইরের ক্লিনিকগুলোতে ছুটতে হতো। কিন্তু বর্তমান পরিচালক হাসপাতালে আসার পর ছয় মাসের মধ্যে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করেছেন। এখন আর রোগীদের বাইরের ক্লিনিকগুলোতে যেতে হয় না।’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: কালের আলো

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ হাসপাতালটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে ইউজার ফি জমা হতো চার কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এ পরিচালক ১২ কোটি টাকা ইউজার ফি সরকারকে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন।

সূত্র মতে, ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটিতে আগে কর্মচারীরা আগে বেতন পেতো ১ হাজার ৪০০ টাকা। তাদের বেতন ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। চাহিদামতো বেতন পেয়ে তারা নিরলসভাবে নিজেদের কাজে মনোযোগী হয়েছে।

বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ হাসপাতালটির পরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় আড়াই বছরে সরকারি শতভাগ ওষুধ রোগীদের সরবরাহের পাশাপাশি সেবার মানোন্নয়ন ঘটিয়েছেন। দালাল মুক্ত করে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত নানা সমস্যা ও অনিয়মের বৃত্ত থেকে হাসপাতালটিকে বের করে এনে চমক সৃষ্টি করেছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহমেদ। ছবি: কালের আলো

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার বাসিন্দারা ছাড়াও গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষজন চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন গড়ে এখানে রোগী ভর্তি হন ৩ হাজার। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা ৬ হাজারের কম নয়।

বিশাল অঙ্কের এসব রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি দিন-রাত ২৪ ঘন্টা তাদের সেবা দিতে এবং অনাবশ্যক রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ দ্রুত বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে রোগীর চাপ কমাতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধার সুফল ভোগ করছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

 

কালের আলো/এসএ/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email