গণিতের ভরাডুবিতে এসএসসিতে ফল ‘বিপর্যয়’

প্রকাশিতঃ 5:39 pm | July 10, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ভয়াবহ ফল বিপর্যয় হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মূলত গণিত বিষয়ে ফেল করার কারণে এবার ফলাফল খারাপ করেছে অধিকাংশ বোর্ড। যে শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ে ভালো করেছে, সেখানে গড় পাসের হারও বেড়েছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে নিচে রয়েছে বরিশাল বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার মাত্র ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে ফেল করেছে প্রায় ৪৪ জন।

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরিশাল বোর্ডে এবার ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে গণিতের ভরাডুবি বড় কারণ। এবার বোর্ডটিতে গণিতে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ, বরিশাল বোর্ডে প্রতি ১০০ জনে ৩৫ জনই গণিতে ফেল করেছেন।

একই অবস্থা ময়মনসিংহ বোর্ডেরও। এ বোর্ডে গড় পাসের হার মাত্র ৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ময়মনসিংহ বোর্ডে গণিতে পাসের হার মাত্র ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যার ধাক্কা লেগেছে গড় পাসের হারেও।

এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার ৭০ শতাংশের ঘরে। ঢাকা বোর্ডে গণিতে পাস করেছেন ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। কুমিল্লায় ৭২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং মাদরাসা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ফলে এ বোর্ডগুলোতেও গড় পাসের হার ‘সন্তোষজনক’ হয়নি।

তবে পাসের হারে ভালো অবস্থানে থাকা রাজশাহী বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা গণিতে বেশ ভালো করেছে। এ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর রাজশাহী বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা যশোর বোর্ডও গণিতে তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। এ বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাসের হার ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গড় পাসের হারে তৃতীয় অবস্থানে থাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে গণিতে পাসের হার সবচেয়ে বেশি। এ বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাস করেছেন ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী। এছাড়া গণিতে ৮০ শতাংশের বেশি পাসের হার রয়েছে চট্টগ্রাম (৮১ দশমিক ৫৩) ও সিলেট (৮৩ দশমিক ১৭) বোর্ডে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক একজন চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণিত ও আইসিটিতে কয়েক বছর ধরে বেশি ফেল ইংরেজিতেও ফেল থাকে। তবে এবার ইংরেজি ও আইসিটিতে বেশ ভালো করেছেন শিক্ষার্থীরা। ওদের সর্বনাশ ঘটেছে গণিতে। এজন্য গড় পাস কমেছে। হয়তো অনেকে গণিতে পাস করলেও ফল খারাপ করায় জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’

‘গণিতভীতি’ না কাটার পেছনে শিক্ষাপদ্ধতিকে দায়ী করেছেন তিনি। তার ভাষ্যমতে, ‘অনেক শিক্ষক এখনও গণিত মুখস্ত করান। ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি সাজেশন দিয়ে দেন যে এগুলো মুখস্ত করলে তুমি পাস করে যাবে বা ভালো ফল করবে। ফলে তারা গণিত সমাধানে সক্ষম হয়ে ওঠে না। প্রস্তুতিবিহীনভাবে পরীক্ষার হলে যায়। মুখস্ত গণিতের থেকে কিছুটা হেরফের হলেই ভুল করে বসে। আর উত্তর মেলাতে পারে না। গণিতে এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে স্কুল পর্যায় থেকে গণিত সমাধানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হতে হবে। মুখস্ত করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

কালের আলো/এএএন