রাঙ্গার কোন পদ পদবীতে থাকার সুযোগ নেই, বলছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী (ভিডিও)
প্রকাশিতঃ 1:33 am | November 13, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :
স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ নূর হোসেন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য নিয়ে সংসদে কড়া সমালোচনাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে তাঁর কোন পদ পদবীতে থাকার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ‘বেসামাল’ রাঙ্গা! (ভিডিও)
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১ টার দিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরের একাত্তর জার্নাল অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মত দেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি রাঙ্গা সম্পর্কে ঠিক কথাই বলেছেন।
আমাদের বর্ষীয়াণ নেতা তোফায়েল আহমেদও বলেছেন রাঙ্গাকে ক্ষমা করার সুযোগ নেই। আমার মনে হয় না শহীদ নূর হোসেনের মাও তাকে ক্ষমা করবে।’
কে মন্ত্রী হবে এটা দল নির্ধারণ করে দেয় এবং সেইভাবে রাঙ্গাও হয়তো মন্ত্রীসভার সদস্য হয়েছিলেন, মন্তব্য করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা যখন ঐক্যমতের সরকার করেছিলাম সেই সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। এরপর জোটগত নির্বাচন হয়েছে। সেই জোটে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কারা কারা মন্ত্রী হবেন সেটা তারা সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুন: রাঙ্গাকে বান্দরের সাথে তুলনা করলেন কাজী ফিরোজ
প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী যোগ করে বলেন, ‘যেখানে তাঁর (রাঙ্গা) চেয়ারম্যান দু:খ প্রকাশ করেছেন, নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, যেখানে তাঁর দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে তাঁরা দু:িখত ও লজ্জিত হয়েছেন। রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টি সেই পদে রাখবে কী রাখবে কীনা, তাঁরা মঙ্গলবার যেভাবে পার্লামেন্টে কথা বলেছেন, সেক্ষেত্রে সংসদে তাঁর কোন পদ পদবীতে থাকার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
‘ভোটের রাজনীতির হিসাবে আমরা বুঝতে পারি আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে নানা রকমের সমঝোতা ও সম্পর্ক তৈরি করে এগোতে হয়। কিন্তু জনগণের প্রতি যাদের কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই তাদের সাথে এভাবে আর কতদিন গাঁটছড়া বেঁধে আওয়ামী লীগকে চলতে হবে? এ থেকে উত্তরণের পথ কী?’

এপি’র সংবাদকর্মী জুলহাস আলমের এ প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ঐক্য রাঙ্গা বা কোন ব্যক্তির সঙ্গে হয়নি। ঐক্য হয়েছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। জাতীয় পার্টির অন্যান্য সংসদ সদস্যদের কথা যদি শুনতেন তাহলে স্পষ্ট জাতীয় পার্টি রাইট ট্র্যাকে আছে।
রাঙ্গা রাইট ট্র্যাকে নেই। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি এ ধরণের বিপদগামী কথা বলেননি বা কাজ করেননি। জিয়াউর রহমানের সময়ে যুবমন্ত্রীর বাসা থেকে গলাকাটা অপরাধীকে পাওয়া গেছে, এরকম ঘটনা কিন্ত ঘটেনি। একজন শহীদকে মাদক আসক্ত বলেছেন রাঙ্গা। আসলে মাদক আসক্ত কে এটা দেশ জাতির প্রশ্ন, বলছিলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
দিনাজপুর-২ (বিরল ও বেচাগঞ্জ) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর এমন জবাবে উপস্থাপক এবার প্রশ্ন করেন, ‘এ ধরণের আসক্তি বা মানসিক ভারসাম্য যদি মন্ত্রণালয় দিয়ে ঠিক রাখতে হয়, মন্ত্রীত্ব চলে গেলে যদি রাশেদ খান মেনন এবং এখন রাঙ্গা মন্তব্য করছেন, তাহলে এটা তো বিরাট সংকট। এর সমাধান কী’?
উপস্থাপকের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের উত্তরে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাঙ্গাকে ওই সময় পুরো মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়নি। তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সেখানে ছিলেন। সেখানে পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন একজন। পুরো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়নি। আপনি দেখেন, আমরা নিরন্তর সংগ্রাম থেকে এসেছি। সেই সংগ্রামের উৎস ছিল মুক্তিযুদ্ধ।
৭৫’র ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর কালাকানুন দিয়ে বাংলাদেশকে পরিচালনা করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারিনি। অন্তর্ভেদী রাজনীতি সমাজ সবকিছু বিকৃত করা হয়েছে। সেই বিকৃত থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নিরন্তর সংগ্রামের লক্ষ্যে আমরা এখনও পৌঁছাতে পারিনি। যেদিন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো সেদিন অবাঞ্চিত মানুষ রাজনীতির আঙিনায় ঘুরাফেরা করার সুযোগ পাবে না’ বলেন প্রথা বিরোধী এ রাজনীতিক।
এরপর উপস্থাপক ইতোপূর্বে মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর জেলে যাওয়ার নজির রয়েছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চান রাঙ্গার এ বিষয়টিকে সরকার কীভাবে দেখবে?
জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার তো নূর হোসেনের শহীদী আত্নত্যাগকে সব সময় সরকার ধারণ করে। আজকে জাতীয় পার্টিকে গণতন্ত্রের সংগ্রামের সঙ্গে যদি থাকতে হয় তাহলে নিশ্চয়ই তাদেরকে এ জায়গায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান এবং জাতীয় পার্টির অবস্থান জানতে চান।
এরপর সংসদে ফ্লোর নিয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্যের বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এডিএ/এমএএএমকে