প্রিয়া সাহার অভিযোগ খতিয়ে দেখবে সরকার : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 12:19 am | July 20, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে করা প্রিয়া সাহার অভিযোগ সরকার খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
শুক্রবার(২০ জুলাই) বিকেলে নিজের ফেরিফাইড ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে তিনি একথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (প্রিয়া সাহা) কেন এটা করলেন, তা সরকার খতিয়ে দেখবে।’
গত বুধবার ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা বলেন, মুসলিম মৌলবাদীরা দেশে তার জমিজমা কেড়ে ও বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে।
এ সময় তিনি সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে থাকতে চান, এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্যও ট্রাম্পকে অনুরোধ জানান।
প্রিয়া সাহার এমন কথপোকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বক্তব্যের জন্য ‘রাষ্ট্রদোহী’ অভিযোগ করে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান নেটিজেনরা।
এমন সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে ‘বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের এনজিওদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশ গুপ্তর মতো মানুষেরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পও জানেন যে তার কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। মার্কিন প্রশাসন তাদের এখানকার দূতাবাসের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত তথ্য পেয়ে থাকে এবং আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রিয়া সাহার সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমালোচনা করছেন। এটাও ঠিক নয়। যেমনটি নয় প্রিয়া সাহার করা অভিযোগ। সমাজের সকল স্তরে যার বিচরণ এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথে যার যোগাযোগ তার একইরকম আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা।’
জানা গেছে, গত বুধবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার ১৭টি দেশের কয়েকজনকে ডেকেছিলেন তাদের কথা শুনতে।
সেখানে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মিয়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ইয়েমেন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সুদান, আফগানিস্তান, উত্তর কোরিয়া, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশের মানুষ নিজেদের কথা বলার সুযোগ পান।
ওই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক পরিচয় দিয়ে প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলছেন, দেশে তার জমিজমা কেড়ে নেয়া ও বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। দেশটিতে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টর সঙ্গে প্রিয়া সাহার কথোপকথন—
প্রিয়া সাহা: ‘স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর মানুষ গুম হয়ে গেছে। প্লিজ, আমাদের বাংলাদেশিদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।
এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমার অনুরোধ, প্লিজ, আমাদের সাহায্য করেন, আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। আমাদের শুধু ওখানে যেন থাকতে পারি সে সাহায্যটুকু করেন! আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি, তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোনো বিচার হয়নি।’
ট্রাম্প: কারা বাড়ি নিয়েছে, কারা জমি কেড়ে নিয়েছে?
প্রিয়া সাহা: ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। সব সময় তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে, সব সময়।’
সংশ্লিষ্টরা সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শাড়ি নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিরী ইউনিয়নের মাটিভাঙ্গা গ্রামে। প্রিয়ার স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক পদে আছেন বলেও জানা গেছে।
কালের আলো/এআর/এমএইচএ