পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক নিয়ে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে সাবেক সচিব প্রশান্ত!

প্রকাশিতঃ 12:47 am | July 14, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। মূলত এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন মিডিয়া এবং নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রকল্প ও ব্যাংকের গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদেরকে দিয়ে ঢাকায় মানবন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘটের মত কর্মসূচীও দেয়া হয়েছে। আর এসব উঠে আসছে বিএনপি-জামাত সমর্থিত গণমাধ্যম সমূহে।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের মূলহোতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন প্রশান্ত কুমার রায় নামে সাবেক একজন আমলা। মূলত তার কাজই হচ্ছে সরকারের সমালোচনা করা এবং উন্নয়নমূলক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র তিনি নিয়মিত সরকার বিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছেন। এই উদ্দেশ্যে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্পকে টার্গেট করেছেন। প্রকল্পগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে হিংসাত্মকভাবে কুৎসা রটাচ্ছেন। হেয় প্রতিপন্ন করছেন কর্মকর্তাদের। সরকার যেমন তাতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তেমনি ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির।

প্রধানমন্ত্রী পল্লী অঞ্চলের প্রত্যেক বাড়িকে উৎপাদনমুখী খামারে রুপান্তরের জন্য ২০০৯ সালে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০০৯-২০১৩ সাল মেয়াদী প্রকল্প পরবর্তীতে জুন, ২০১৬ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

প্রকল্পের অধীনে ৪০২১৫টি সমিতির মাধ্যমে সংগঠিত প্রায় ২২ লক্ষ পরিবারে সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি, দারিদ্র দূরীকরণ এবং অন্যান্য কর্মসূচীতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হওয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিচালনার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যংক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সে প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কার্যক্রম প্রায় আরও ৩২ লক্ষ পরিবারকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয় ও প্রকল্পের মেয়াদ জুন, ২০১৬ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সঙ্গতকারণে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধন করা হয়।

প্রকল্পের পাশাপাশি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম চালানোর জন্য জুন, ২০১৬ সালের পূর্বে গঠিত ৪০২১৫টি সমিতির প্রায় ২২ লক্ষ পরিবার এবং সঞ্চয়, সম্পদ এবং জনবল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়।

সংশোধিত আইনের বিধান অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মধ্যে ২২/০৩/২০১৭ তারিখে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪০২১৫টি সমিতি প্রায় ২২ লক্ষ সদস্য এবং সঞ্চয় ও আবর্তক ঋণ তথা সম্পদসহ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। প্রকল্পের নাম আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প করা হয়।

প্রকল্পে কর্মরত ৫৩৬৮ জন জনবলের ইতোমধ্যে ৪৭৫৬ জন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সমন্বয়কালী ৩৮৬ জনের মধ্যে ৩৬২ জন, ফিল্ড সুপারভাইজার ৭৪৩ জনের মধ্যে ৭২৭ জন, কম্পিউটার অপারেটর ৩৭৯ জনের মধ্যে ৩৭৪ জন, মাঠ সহকারী ৩৮৩৫ জনের মধ্যে ৩২৬৮ জন ও অন্যান্য সকল পদে ২১ জন স্থানান্তরিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ৬১২ জন কর্মকর্তা /কর্মচারীগণের শৃঙ্খলাজনিত বিষয় ও অভিযোগ এবং নিম্ন পারফরমেন্সের কারণে এখনও স্থানান্তরিত হননি। তবে যারা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবেন তাদেরকেও ব্যাংকে স্থানান্তর করা হবে।

ব্যাংকে স্থানান্তরিত জনবলের সকলকে ১/৮/১৯ তারিখে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান শুরু হয়েছে। পদোন্নতি নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে চুড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। উক্ত নীতিমালা অনুমোদনের সাথে সাথে পদোন্নতি প্রধান করা হবে।

ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার লেভেলে কোনো কর্মকর্তা নেই। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারী প্রবিধানমালা অনুযায়ী সিনিয়র অফিসারের ৫৫০টি পদের মধ্যে ৫০% পদ সরাসরি নিয়োগ হবে। অপর ৫০% পদ যারা প্রকল্পে উপজেলা সমন্বয়কারী হিসেবে কর্মরত আছেন ( বর্তমানে ব্যাংক অফিসার (সাধারণ) পদে) তাঁদের মধ্য হতে পূরণ হবে।

সে অনুযায়ী সিনিয়র ও তদুর্ধ্ব পর্যায়ের অফিসার সরাসরি নিয়োগের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক ২৭৩জন প্রার্থীকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। তাঁদের পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে নিয়োগ আদেশ জারী করা হয়।

ইতোমধ্যে প্রকল্প থেকে আসা অফিসার (সাধারণ) পদে কর্মরত ১২৯জন মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট মামলা করেন এবং মহামান্য আদালত তাঁদের জন্য ১২৯টি পদে সংরক্ষণ করার আদেশ প্রদান করেন। সে প্রেক্ষিতে সিনিয়র অফিসারের ৫০% পদ রিজার্ভ থাকা স্বত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত অফিসারগণের মধ্যে ১২৯ জন বাদ রেখে অপর ১৪৮জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

কাজেই, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম বিধি-বিধান এবং মহামান্য আদালতের ১২৯টি সিনিয়র অফিসারের পদ রিজার্ভ রাখার নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। তথাপি একটি মহল হীন চক্রান্ত করে অসত্য তথ্য প্রচার করে কর্মকর্তা/কর্মচারী ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এমনকি ব্যাংকের লেনদেন সকল উপজেলায় বন্ধ রাখার জন্য ফেসবুকে প্রচার চালানো হচ্ছে।

এ বিভ্রান্তি ছড়ানোর সাথে প্রাক্তন সচিব ডঃ প্রশান্ত কুমার রায় সরাসরি সম্পৃক্ত। তিনি এবং তার কিছু সহযোগী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়া ও ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

যে সব কর্মকর্তা/কর্মচারী অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, নিম্ন পারফর্মেন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাঁদের এবং যে সব কর্মকর্তা সিনিয়য়র অফিসার পদে পদন্নতিযোগ্য হবেন না, তাঁদের তিনি নিজ ফেসবুক আইডিতে মানববন্ধনে উদ্বুদ্ধ করছেন।

সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সুপারিশকৃত কর্মকর্তাগণ যাতে যোগদান করতে না পারেন সে জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিফলেট তৈরি করে, কিছু ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে ঢাকায় আন্দোলন করছেন, যা নিরসন হওয়া খুবই জরুরী।

কালের আলো/এআর/এমএম