শাওনের সঙ্গে সিদ্দিকী নাজমুলের শেষ স্মৃতি, হত্যাকান্ডের বিচার দাবি

প্রকাশিতঃ 4:25 am | March 10, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

এবার ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফি শাওনের খুনিদের বিচার দাবি করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। শুক্রবার (০৯ মার্চ) রাতে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্টে এ দাবি করেন তিনি।

শাওনের ছবি সম্বলিত সেই স্ট্যাটাসে সিদ্দিকী নাজমুল আলম লিখেছেন, ‘অপরাধী যেই হোক দ্রুত সনাক্ত করে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কুদ্দুস ভাই সারাজীবন রাজনীতি করে উপহার পেলো সন্তানের লাশ।’ এ স্ট্যাটাসে লাইক কমেন্টস’র হিড়িক পড়ে গেছে। সবাই এক বাক্যে এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেছেন।

ইফতেখার আহমেদ সুজন নামে একজনের মন্তব্য এমন-‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ খুব কষ্টের। পিতাদের কান্না খুব বেফাশ শোনায়। কান্নার শব্দ শোনে কষ্ট পেয়েছিলাম প্রিয় স্যার মতিউর রহমানের, খোকা স্যারের শেষ পেলাম কুদ্দুস কাকার কান্নায়।’

প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান সরকারের ধর্মমন্ত্রী। বছর কয়েক আগে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় অকালেই প্রাণ হারায় তাঁর ছোট চিকিৎসক ছেলে মুশফিকুর রহমান শুভ। আর অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কবি মাহবুবুল হক শাকিলও গত বছর মারা যান। অকালে ছেলে হারানো দু’বর্ষীয়াণ আওয়ামী লীগ নেতার আর্তনাদ-আহাজারি যেভাবে সবাইকে বেদনাসিক্ত করেছিল ঠিক তেমনি শাওনের বাবা ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম.এ.কুদ্দুসের বোবা কান্নার পাষাণ যন্ত্রণা স্পর্শ করেছে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে। ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে প্রতিবাদী মিছিলের মুখ ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা ‘অন্ত:প্রাণ’ এ সাবেক ছাত্রনেতা দীর্ঘদিন যাবত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।

ছাত্রলীগের রাজনীতি’র পাট চুকালেও এখনো এ সংগঠনের কোন নেতা-কর্মী’র আপদে-বিপদে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন লড়াকু মানসিকতার এ রাজনীতিকই। ময়মনসিংহে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা শাওন হত্যাকান্ডের পরেও চুপ থাকতে পারেননি তিনি।

ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান কোন নেতার আগে ‘রহস্যেঘেরা’ এ মার্ডার নিয়ে মুখ খুলেছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে মূর্তমান আতঙ্ক, বজ্রকন্ঠের সিদ্দিকী নাজমুল। টানা ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হেরে যাওয়া ছাত্রনেতা শাওনকে নিয়ে বৃহস্পতিবার (০৮ মার্চ) নিজের ফেসবুক ওয়ালে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস লিখেন তিনি।

সেখানে শাওনের সঙ্গে মধুর স্মৃতিচারণের বিষয়টি যেমনি উঠে এসেছে তেমনি তাঁর কন্ঠে ঝরেছে রাজ্যের আক্ষেপ আর অভিমান। নাজমুল লিখেছেন- ‘সারাদিন ব্যস্ততা ছিলো। কেমন সেলফিশ আমি তোর খোঁজ নেওয়াই হলোনা। এভাবে তুই চলে গেলি ?

লাস্টবার সহ-সভাপতি হবার পরে বলেছিলি অনেক কথা …………….। যখন তোরে হাত দিয়ে ধরলাম বলছিলো ভাই ছাইরেননা আমারে কখনও। তুই তো চলে গেলি …….।’ ব্যাথাতুর কন্ঠে নাজমুলের এমন উচ্চারণে তাঁর সঙ্গে যেন কেঁদেছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে তার লাখো ভক্ত-অনুসারীরাও।

এ স্ট্যাটাসের কমেন্টস বক্সে ছাত্রলীগ নেত্রী মায়িশা ফাহমিদা নিধি লিখেছেন- ‘ভাই কাছের সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছে। শাকিল ভাই চলে গেলো, বন্ধু শাওন চলে গেলো।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান শিমু’র মন্তব্য ছিল এমন- ‘এভাবে আর কতো? কোনভাবেই শাওনের মৃত্যু মানতে পারছি না ভাই। শাওন হত্যার বিচার দেখতে চাই।’

ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ.কুদ্দুসের একমাত্র ছেলে আশফাক আল রাফি শাওন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে বন্ধুরা উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার (০৮ মার্চ) দুপুরে মারা যান শাওন।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পর পরই পুলিশ জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে আটক করে। কিন্তু শাওনের পরিবার মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করায় ৫৪ ধারায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।

এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সরগরম হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের পর পর দু’টি স্ট্যাটাস শাওন হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিকে আরো জোরালো করে তুলেছে।

আরও পড়ুন : কারা খুন করলো ছাত্রলীগ নেতা শাওনকে?

কালের আলো/আরটি/এমএম

Print Friendly, PDF & Email