আত্মশক্তিতে বলীয়ান মুক্তিযোদ্ধারা, সেনাপ্রধানের কন্ঠে চির আরাধ্য স্বাধীনতার সার কথা

প্রকাশিতঃ 11:48 am | May 30, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো :

রীতিমতোই সেজেছিল ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টার। এখানকার প্রবেশ পথ আর বাহিরের পথ হয়ে উঠেছিল একাত্তরের চেতনায় রঙিন!

জাতির বীর সেনানীদের নানা উপমায় বরণ করে নেয়া শব্দমালায় প্রকারান্তরে কঠিন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক অপশক্তির শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মর্মবাণীই যেন উচ্চারিত হয়েছিল।

আরো পড়ুন: সেনা মালঞ্চে জাতির সূর্য সন্তানদের মিলনমেলা, হৃদয়গ্রোথিত আবেগে স্মরণ বঙ্গবন্ধুকে

‘যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজ’, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ বা ‘মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার’ শীর্ষক আত্মগৌরব অর্জনের বিজয়গাঁথার এসব বাক্য জাগিয়ে তুলেছিল প্রাণের স্পন্দন।

আবেগ-আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও।

একাত্তরের সুমহান চেতনায় বাঙালির বীরত্ব, ত্যাগ আর সংগ্রামের চিহ্ন নিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নিমন্ত্রণে ছুটে এসেছিলেন আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েই।

সেনাবাহিনীর নিজস্ব পরিবহনে যুদ্ধ দিনের স্মৃতিমাখা দিনগুলোর মতোই একসুতোয় গেঁথেছিলেন নিজেদের।

আরো পড়ুন: খুলেছে সম্ভাবনার দুয়ার, কুয়েতে যাচ্ছে আরও ৩৮৯ সেনাসদস্য

বুধবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় প্রায় তিন শতাধিক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে এসে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনিতে প্রজ্বলিত হয়ে উঠেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহ্নিশিখায় নবজাগরণ তৈরি করা দেশপ্রেমিক এ বাহিনীর সর্বোচ্চ কর্মকর্তা শত্রু সেনাদের খতম করতে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গণ করা জাতির সূর্য সন্তানদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের সার কথা তুলে ধরেন।

উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন-শোষণ আর পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী, ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শীতার কথা।

জাতির জনকের কিংবদন্তিতুল্য তীব্র কন্ঠের উচ্চারণের ফলেই মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নিরস্ত্র মুক্তি সংগ্রামীরা মাতৃভূমি রক্ষায় অকুতোভয়ে লড়াইয়ে নেমে পড়ে, দীপ্তি ছড়িয়ে প্রজ্বলিত করে সংগ্রামের মশাল এমনটিও উচ্চারণ করেন অমিত দৃঢ়তায়।

সেনাপ্রধান মনে করিয়ে দেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধুই গোটা জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এনে দিয়েছিলেন চির আরাধ্য স্বাধীনতা।

বাংলাদেশের চলার মসৃণ পথ রচনা করে স্বাধীনতা নামক শব্দটিই। সেনাপ্রধানের এ সম্মান ও আতিথেয়তায় নিজেদের আত্মতৃপ্তির কথা জানান রাজধানীর মোহাম্মদপুর কলেজ গেট এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো: সিরাজুল ইসলাম।

৬৯ বছর বয়সী তেজোদীপ্ত এ মানুষটি বলেন, ‘প্রতিবারই জাঁকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আমাদের সম্মান জানানো হয়। আমাদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগ আমাদের পুনরায় বিজয়ের আনন্দ আবেগকে একাকার করে দেয়।’

‘সবাই (মুক্তিযোদ্ধারা) মনের কথা বলছে, আমিও একটু বলে আসি’ অস্ফুট কন্ঠে বলতে বলতেই অনুষ্ঠানের মূল ব্যানারের সামনে বিশিষ্ট অতিথিদের নিয়ে বসা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছে ছুটে যান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ ভূইয়া।

দেশের একমাত্র চারতারকা জেনারেলের মতোই মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনিও। বসে না থেকে দাঁড়িয়ে বিনয়ের সঙ্গেই হাত ঝাঁকুনির মাধ্যমে প্রীতিজ্ঞাপনের পর ধৈর্য্য নিয়েই তাঁর সমস্যার কথা শুনলেন সেনাপ্রধান।

খুশি মনেই পুনরায় নিজের চেয়ারে ফিরে গেলেন ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর মহান ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান।

কালের আলো’র সঙ্গে পরক্ষণেই আলাপে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে লতিফ ভূইয়া বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা শুধু দেশকেই শত্রুমুক্ত করেনি।

নিজেদের সন্তান এবং নতুন প্রজন্মের মনে তাঁরাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বীজ বুনে যাচ্ছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার মুখে তাঁরা যুদ্ধের গল্প শুনেই অনুপ্রাণিত হচ্ছে দেশপ্রেমে।’

পাশের সিটে বসা আরেক মুক্তিযোদ্ধা যোগ করে বললেন এমন-‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া কার্যক্রমে সব রকমের সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়েছিলেন।

আর স্বাধীনতার ৪৮ বছরের মাথায় তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যার নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এমন ভাবতেই ভরে উঠে মন।’

কালের আলো/এএ/এএএমকে