অপ্রতিরোধ্য মানব পাচারকারীরা
প্রকাশিতঃ 8:25 am | October 06, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
মানব পাচার আমাদের বড় সমস্যাগুলোর একটি। অথচ সরকারের এ ব্যাপারে যতটা নজর দেওয়া প্রত্যাশিত ছিল, ততটা দৃশ্যমান হয়নি। ফলে মানব পাচার বেড়েই চলেছে। আর ভাগ্য বদলাতে অনেকে দেশ-বিদেশি মানব পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবস-২০২৫ পালন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছিলেন, ‘মানব পাচার প্রতিরোধ একক কোনো প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প কিংবা মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। সরকার ও সমাজের সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের ভিত্তিতে মানব পাচার প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া সংঘবদ্ধ পাচারচক্র নিশ্চিহ্ন করতে হলে দেশে শক্ত আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে।’
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারবিষয়ক প্রতিবেদন ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন্স (টিআইপি) রিপোর্ট ২০২৫’-এ বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার সংক্রান্ত যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে সেটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদন বলছে, এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৪১০ ব্যক্তি পাচারের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচারের শিকার, ২ হাজার ৫৭২ জন জোরপূর্বক শ্রমের শিকার এবং ৭৩ জন অনির্দিষ্ট প্রকারের পাচারের শিকার হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার পাচার নির্মূলের জন্য ন্যূনতম মান সম্পূর্ণরূপে পূরণ করেনি। তবে এটি করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা পাচারে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব মানব পাচারবিরোধী দিবসের আলোচনার আগে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও ভুক্তভোগীদের অধিকার রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক আরও একটি প্যানেল আলোচনা হয়েছিল সেদিন। ওই আলোচনায় আলোচকেরা সম্মিলিতভাবে মানব পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ এবং ভুক্তভোগীবান্ধব ও মানবিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। এই আলোচনায় সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জন্য অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রিয় টুলস তৈরি, সাইবার-ট্রাফিকিং প্রতিরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতের বিষয়গুলো উঠে আসে। এ আয়োজন ‘আশ্বাস’ প্রকল্পের সারভাইভার লিডার (পাচার থেকে বেঁচে ফেরা), যাঁরা অন্য সব সারভাইভার জন্য একটি আশার আলো হিসেবে কাজ করছেন এবং মানব পাচার প্রতিরোধে সক্রিয় কর্মীরা, যাঁরা মানব পাচার প্রতিরোধে নিজেদের এলাকায় বিশেষ অবদান রাখছেন, তাঁদের সম্মাননা দেওয়া হয়।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় সাত লাখ মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমান, যাদের একটি বড় অংশ যায় পাচার হয়ে। দেশের দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকরা এখনো ঋণ বা জমিজিরাত বিক্রি বা বন্ধক রেখে অনিশ্চয়তা আছে জেনেও আদম পাচারকারীদের শরণাপন্ন হন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, পাচারকারীরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের সহায়তা পেয়ে থাকে। অন্যদিকে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নজিরও খুবই কম। অনেকে ধরা পড়েন না, যারা ধরা পড়েন, তারাও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসেন। মানব পাচার প্রতিরোধে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর।
কালের আলো/এমএএইচ/এইচএন