বিজয় র্যালিতে নেতাকর্মীদের ঢল, রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের স্বার্থে এক থাকার আহ্বান তারেক রহমানের
প্রকাশিতঃ 5:41 pm | August 06, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিজয় র্যালিতে বড় শোডাউন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই র্যালিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই র্যালিটি শুরু হয়। বিজয় র্যালি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে যোগ দেন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। র্যালি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় মতভেদ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে এক থাকার আহ্বান জানান তিনি। জাতীয় কোনো ইস্যুতে বা গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয় তিনি সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
পরে বিজয় র্যালিটি নাইটেঙ্গেল মোড়, পুরানা পল্টন, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ইউনিটের বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দুপুর থেকেই ছোট-বড় মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের মাথায় ছিল নানা রঙের ক্যাপ, হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা শোভা পায়। র্যালিতে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা ‘তারেক রহমান বীরের বেশে-আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘সবার আগে-বাংলাদেশ’, ‘মা মাটি ডাকছে-তারেক রহমান আসছে’, ‘সাইদ ওয়াসিম মুগ্ধ-শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। র্যালিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও সালাহউদ্দিন আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বলতে চাই- বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদ থাকবে। এসব মতভেদ দূর করতে আমাদের আলোচনা চলবে। জাতীয় কোনো ইস্যুতে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়, সেই লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। কারণ, আমি বিশ্বাস করি ধর্ম, দর্শন, মত যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার। এসময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে সবার সহযোগিতা ও সমর্থন চান তিনি।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকদের আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নাগরিকদের কাছে আহ্বান রাখছি, নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, ফ্যাসিবাদের সময় আমরা নিরাপদ ছিলাম না। আমাদের সন্তানরা নিরাপদ ছিল না। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। পুরো বাংলাদেশকে বর্বর বন্দিশালা বানানো হয়েছিল। গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকায় এমন হয়েছিল।
গণতন্ত্র ও দেশের জনগণের সামনে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগ এসেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, চব্বিশের আন্দোলনের কারণে আসা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করা গেলে; জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারলে, ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে না। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না। আর কোনো রক্তাক্ত চব্বিশ আমাদের দেখতে হবে না। বিজয় মিছিল আয়োজন নিয়ে তারেক রহমান বলেন, পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টের আমলে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। আজকের বিজয় মিছিল অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা।
বিজয় অর্জনে সহযোগিতা করায় সেনাবাহিনীকে ফখরুলের ধন্যবাদ
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিজয় অর্জনে সহযোগিতা করায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র্যালির উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, দেশের সমস্ত মানুষকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে, ছাত্রদেরকে এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকেও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সহযোগিতায় আমরা এই বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি আমাদের নেতা তারেক রহমানকে সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং পরে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করেছি। আমরা কারাভোগ করেছি, নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছি কিন্তু কখনো মাথা নত করিনি। আমরা লড়াই করেছি, সামনের দিকে গিয়েছি। এসময় তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করেন।
খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, শত নির্যাতনের পরও বিএনপির নেতাকর্মীরা দমে যায়নি, কখনো মাথা নত করেনি। আমরা একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। মির্জা ফখরুল বলেন, খুব শিগগিরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে।
শুধু ৩৬ দিনের নয়, এটা ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল
বিজয় র্যালি শুরুর আগে বক্তৃতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমরা যে সফলতা উদযাপন করছি সেটি শুধু ৩৬ দিনের নয়, এটা ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগ-সংগ্রামের কথা ভোলা যাবে না। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ ১/১১ এর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন, কেউ গতকালের ঘোষণাপত্রের বক্তব্যকে বিরোধিতা করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমিও এটাকে স্বাগত জানাই। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তবে শুধু একটি কথা বলতে চাই। সেখানে ২৩ বছরের সংগ্রামের পর যে স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম রাখা হয়নি।’
এই বাংলাদেশ হবে এক নীতির বাংলাদেশ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি হয়েছে। আজকে দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিন। আমাদের প্রতিশ্রুতি, এই বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে কার্যকর গণতন্ত্রের একটি দেশ। বিজয় র্যালি শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ। এই বাংলাদেশ হবে এক নীতির বাংলাদেশ। সবার আগে বাংলাদেশ, আমাদের কোনো প্রভু থাকবে না, বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, এই বাংলাদেশ তাবেদার মুক্ত থাকবে। এই বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলবো।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের জনমানুষের প্রত্যাশা, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কার্যকর হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্রের সংবিধানে গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে, রাষ্ট্র কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে, আমাদের প্রত্যাশিত সমাজ বিনির্মাণ হবে। প্রত্যাশিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হবে। এটাই হবে আজকের দিনের অঙ্গীকার। এটাই হবে আজকের দিনে আমাদের শপথ। বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আগামী দিনের যে সব সংস্কার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হবে, সনদ স্বাক্ষরিত হবে। প্রত্যেকটি সংস্কার পরবর্তীতে মতামত নেবে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। বাস্তবায়িত হবে একমাত্র বৈধ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায়।
কালের আলো/এমএসএএকে/এএইচ