রাজনীতিতে চর্চিত বিষয় বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব
প্রকাশিতঃ 11:35 am | May 27, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
সম্প্রতি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে মতবিরোধ প্রকাশ পাচ্ছে। কয়েক জন উপদেষ্টার নাম ধরে তাদের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। একাত্তর ইস্যুতে জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিবন্ধন না থাকা দল দুটির মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছে। আর বিএনপির সঙ্গে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এনসিপি।
বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায়। পক্ষান্তরে এনসিপি চাচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। দল দুটির নেতারা একে অপরকে দোষারাপ করতে কোনো কমতি রাখছে না। এনসিপির নেতারা বলছেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের জায়গায় অবস্থান নিচ্ছে। আর বিএনপি নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ নেতাদের দলে ভেড়াচ্ছে এনসিপি। সঙ্গে যোগ করেছে, দুর্নীতির অভিযোগও।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের দায়িত্ব নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। এতে দুই দলের নেতারাই পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করতে থাকেন। ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকাবাসীকে নিয়ে টানা কয়েকদিন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন। এরপর এনসিপি নেতাকর্মীরা অনেকটা পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে কমিশন বাতিল ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে দলটি। এতে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়।
শনিবার (২৪ মে) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে বিএনপি সরকারে থাকা দুজন ছাত্র উপদেষ্টার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। এই দুজন উপদেষ্টা সরাসরি এনসিপির পদে না থাকলেও তারা ভবিষ্যতে এনসিপি থেকেই নির্বাচন করবেন বলে চর্চা আছে। বিএনপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের পাল্টা বক্তব্যও কিছুটা প্রমাণ করে এই দুই নেতা তাদের লোক।
বিএনপি লিখিত বক্তব্যে বলে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যেন দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।
জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি দলটি গঠনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক মিত্রতাও ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতেও দল দুটি এক মঞ্চে ছিল।
পরে জামায়াত ইস্যু ঘিরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ঘিরে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েনও তৈরি হয়। তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সংবিধানবিরোধী যে কাজটি করেছেন তাতে তিনি শপথের ভায়োলেশন করেছেন।’ যদিও পরবর্তীতে মাহফুজ বক্তব্য থেকে সরে এসে দু:খ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে রাজনীতির মাঠের অন্যতম শক্তি বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির এ রকম বিরোধকে খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এ বিরোধের পেছনে কোনো তৃতীয় শক্তি কাজ করে থাকতে পারে। যারা দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চায় না। তবে এভাবে চলতে থাকলে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সুযোগ নেবে। যা গণঅভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। এজন্য সরকারের উচিত কোনো ষড়যন্ত্রকে সুযোগ না দিয়ে দেশকে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়া। নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে বেশি মনোযোগী হলে সবার জন্য মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর বলেন, ‘রাজনৈতিক বিভাজন এমন কোনো পক্ষের সৃষ্টি যারা এনসিপির ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাইছে। আমরা জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করি, যে চেতনা একাত্তরকেও ধারণ করে। স্পেসিফিক কোনো দলের নামে আমরা কখনো নেগেটিভ বক্তব্য দেইনি। একাত্তরের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, জাতীয় ঐক্য না হলে কোনো দেশ গুরুত্বপূর্ণ সংকটের সমাধান করতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, গণঅভ্যুত্থানের সময়ে যে ঐক্য ছিল, তা এখন নেই। দলগুলো একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। তাদের মধ্যে একেবারেই ঐক্য ভেঙে পড়েছে। আবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও একটা ঢিলেঢালা ভাব, গড়িমসি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার ১০ মাসে পড়েছে, অথচ সংস্কারে কোনো অগ্রগতি নেই। শুরু থেকেই সরকারের ম্যান্ডেটই ছিল দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। সরকার তো সেটিও করছে না। সব কিছু মিলিয়ে মনে হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি একটা টালমাটাল অবস্থায় চলে যাচ্ছে।
কালের আলো/এমএএইচএন