তুমি কী তোমার চাকরিকে ঘৃণা কর?

প্রকাশিতঃ 2:41 pm | May 24, 2025

সাইফুল হোসেন:

আজকের বিশ্বে চাকরি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ মানুষই তাদের চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। বরং তারা এক ধরনের হতাশা, অসন্তুষ্টি কিংবা বিরক্তি অনুভব করেন। সম্প্রতি করা একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ তাদের চাকরির প্রতি এক ধরনের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে এই হার আরও বেশি, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ তাদের কাজের প্রতি কোনো না কোনো পর্যায়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অসন্তুষ্টির কারণ কী, এবং এর সমাধানই বা কী হতে পারে?

চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখা যায়, কাজের পরিবেশ এবং চাকরির ধরন। অনেকেই তাদের কাজকে একঘেয়ে, অর্থহীন এবং বিরক্তিকর মনে করেন। উন্নত বিশ্বেও একই চিত্র। গ্যালাপের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ শতাংশ কর্মী তাদের চাকরিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রধান কারণ কাজের চাপ, একঘেয়ে রুটিন, এবং উন্নতির সুযোগের অভাব। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পরিস্থিতি আরও গুরুতর। কর্মপরিবেশের নিম্নমান, কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং পর্যাপ্ত পুরস্কারের অভাব কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার জন্ম দিচ্ছে।

তবে চাকরি নিয়ে এই ঘৃণা বা অসন্তুষ্টি কেবল কর্মী বা প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করছে না, এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট কর্মীরা সাধারণত কম উৎপাদনশীল হন, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ কারণে উন্নত দেশগুলোতে কর্মীদের সন্তুষ্টি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে কর্মীদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে নমনীয় কাজের সময়, নিয়মিত ছুটি, এবং সঠিক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা।

চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টি কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনযোগ্য বিষয়। নিজেকে এবং নিজের কাজকে মূল্যায়ন করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে চাকরিকে আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এতে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব।

বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ গ্রহণের সময় এসেছে। কারণ কর্মীদের অসন্তুষ্টি না কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি, এটি পুরো সমাজের জন্যও ক্ষতিকর। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মীই তাদের বর্তমান চাকরি ছেড়ে দিতে চান, যদি তারা অন্য কোনো ভালো সুযোগ পান। এটি একটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান। এমন পরিস্থিতিতে, নিজের চাকরির প্রতি ঘৃণা বা অসন্তোষ থেকে বেরিয়ে আসার প্রথম ধাপ হলো, নিজের কাজ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। চাকরি মানেই শুধু অর্থ উপার্জন নয়, বরং ব্যক্তিগত বিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠারও মাধ্যম। কাজের মধ্যে ইতিবাচক দিকগুলো আবিষ্কার করতে পারলে চাকরির প্রতি অসন্তোষ অনেকটাই কমে যাবে।

দ্বিতীয়ত, নিজের আগ্রহ এবং দক্ষতা অনুযায়ী ক্যারিয়ার নির্বাচন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই শুধু আর্থিক নিরাপত্তার জন্য ভুল ক্যারিয়ারে প্রবেশ করেন, যা পরবর্তীতে দীর্ঘস্থায়ী অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ক্যারিয়ার নির্বাচন এবং পরিবর্তনের ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। নিজের পছন্দের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে পারলে চাকরির প্রতি ঘৃণা বা অসন্তুষ্টি অনেকটাই দূর করা সম্ভব।

পরিশেষে, চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টি কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়, বরং এটি একটি পরিবর্তনযোগ্য বিষয়। নিজেকে এবং নিজের কাজকে মূল্যায়ন করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মাধ্যমে চাকরিকে আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকলে তা এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে হবে। এতে ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব।

লেখক : কলামিস্ট, ইউটিউবার এবং ফাইনান্স ও বিজনেস, স্ট্রাটেজিস্ট অ্যান্ড সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।