চবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন আজ

প্রকাশিতঃ 9:36 am | May 14, 2025

চবি প্রতিবেদক, কালের আলো:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন হতে যাচ্ছে আজ। একই স্থানে এত শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে সমাবর্তন দেওয়ার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিগত প্রশাসনগুলো বারবার কথা দিয়েও সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেনি। কিন্তু বর্তমান কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র আট মাসের মধ্যেই এত বড় সমাবর্তন উপহার দিচ্ছে।

এ উপলক্ষ্যে প্রায় ৩৬ বছর পর আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পা রাখতে যাচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দীর্ঘ দিন পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রত্যাবর্তন হচ্ছে সমাবর্তনের বক্তা হিসেবে।

বুধবার (১৪ মে) চবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সমাবর্তন। এতে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা প্রায় সাড়ে ২২ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জন এমফিল ডিগ্রিধারী রয়েছেন।

অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ (৪,৯৮৭ জন), এরপর ব্যবসায় প্রশাসন (৪,৫৯৬ জন), সমাজবিজ্ঞান (৪,১৫৮ জন) এবং বিজ্ঞান অনুষদ (২,৭৬৭ জন)।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ঐতিহাসিক আয়োজনে গৌরব যুক্ত করবেন চবির প্রাক্তন শিক্ষক ড. ইউনূস, যাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এই বিশাল আয়োজনে খরচ হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি এসেছে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ফি থেকে। আয়োজনকে সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১৯টি উপ-কমিটি।

সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষ্যে এ দিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীদের সিঙ্গেল লাইনে প্রবেশ করতে হবে এবং দুপুর ১টার পর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। এছাড়াও যেকোনো ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকে থাকবে পার্কিং ও বাস ট্রান্সফারের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ছাড়বে ১০০টি বিশেষ বাস এবং চলবে চারটি বিশেষ শাটল ট্রেন। ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্য থাকবে শাটল বাস সার্ভিস।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ১২ মে থেকে গাউন ও টুপি নিজস্ব বিভাগ থেকে সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। তবে অনুষ্ঠানের পরপরই গাউন জমা দিয়ে তারা সনদ ও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করবেন। এছাড়া সমাবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২৬ হাজার উপহার সামগ্রী। প্রত্যেকে পাবেন একটি জুটের ব্যাগ, কোর্ট পিন, কলম ও মোবাইল ওয়ালেট সমন্বিত কম্বো বক্স।

সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। যারা মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জন্য ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি চত্বরসহ কয়েকটি স্থানে থাকবে এলইডি স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা।

সমাবর্তন উদ্‌যাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী জানান, “একক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সমাবর্তন। সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে এতে অংশ নিবেন, এটাই প্রত্যাশা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “৫৮ বছরের ইতিহাসে মাত্র চারটি সমাবর্তন হয়েছে। এবার আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। একই সমাবেশস্থলে এত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে সমাবর্তন, বিশ্বের ইতিহাসে এটাই হবে প্রথম।”

কালের আলো/এমডিএইচ