সিদ্ধান্ত-সমঝোতা না হলেও ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’

প্রকাশিতঃ 10:31 pm | May 04, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ হয়ে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে ‘মানবিক করিডোর’ দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে এমন খবর বেশ কিছুদিন যাবতই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সরগরম ও উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। করিডোর দিলে বাংলাদেশ নিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়ে পড়বে ইত্যাকার আলোচনা-সমালোচনা যেন তুঙ্গে ওঠেছে। অতীতের ধারাবাহিকতায় পাশের দেশ ভারতের গণমাধ্যমও এই ইস্যুতে আরেক কাঠি সরেস! ঘটনার চেয়ে রটনায় যে তাঁরা সিদ্ধহস্ত এই বিষয়টির আরও একবার প্রমাণ মিললো। বিষয়টিকে প্রতিবেশী দেশটির মিডিয়া ট্রায়ালের এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ ইস্যুতে ছড়ানো গুজব ও অপপ্রচারের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। আর যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মিয়ানমারে কোনো ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। মানবিক করিডোর নিয়ে আমরা কোনো আলোচনা বা চুক্তিতে পৌঁছাইনি।’ বিষয়টিকে ‘মানবিক করিডোর’ বলতেও আপত্তি জানিয়েছেন উপদেষ্টা। বলেছেন, ‘এটা মানবিক করিডোর নয়, এটা মানবিক চ্যানেল। করিডোরের ব্যাখ্যা/সংজ্ঞা আলাদা। এমন চ্যানেল বাস্তবায়িত হলে তা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এবং শুধু ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তায় ব্যবহৃত হবে।’

রোববার (০৪ মে) দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন : আঞ্চলিক নিরাপত্তার উপর প্রভাব এবং ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক এই সেমিনারটির যৌথ আয়োজক ছিল সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বিইউপি।

মানবিক করিডোর আলোচনার সূত্রপাত যেভাবে
২০২১ সাল থেকে সামরিক জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধে বিপর্যপ্ত বাংলাদেশের পূর্বের প্রতিবেশী মিয়ানমার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের লাগোয়া রাখাইন রাজ্যের পুরোটা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। শুধু এই রাজ্যের কায়ুকফায়ু সমুদ্রবন্দরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে সামরিক জান্তা। রাখাইনে যুদ্ধের তীব্রতার মধ্যে গত নভেম্বরে ‘রাখাইন: গড়ে উঠছে একটি দুর্ভিক্ষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রাখাইন। অনুমান হচ্ছে, ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিলে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কেবল ২০ শতাংশ মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারবে। বীজ ও সারের অভাব, বাজে আবহাওয়া এবং বাস্তুচ্যুতির কারণে মানুষ কৃষি কাজ থেকে দূরে থাকায় ধান উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, রাখাইনের ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। তবে, রাখাইনের প্রবেশপথের পাশাপাশি একমাত্র সমুদ্রবন্দরটি দখলে আছে মিয়ানমার জান্তা সরকারের। এর ফলে রাখাইনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পণ্যে ঢোকার পথ বন্ধ। এর মধ্যে মানুষের আর্থিক সঙ্কট এবং ব্যাপক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উপার্জন আর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

  • ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ প্রবাদের মতোই ভারতীয় মিডিয়ার কাল্পনিক বয়ান
  • এই ইস্যুতেও নানা রটনা এবং রঙ মাখানো গল্পের ছড়াছড়ি
  • ভারতের সংঘবদ্ধ অপপ্রচার রীতিমতো ‘তথ্য সন্ত্রাস’

সূত্র জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। ৭ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম আসার কথা তুলে ধরে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার- সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলাম। তাকে আমরা বলেছি, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা, যে সঙ্কট সেটা মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।’

তাঁর এই বক্তব্যের পর প্রায় তিন সপ্তাহ পর গত রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে। কিন্তু এটাতে আমাদের কিছু শর্ত আছে, সেটার বিস্তারিততে যাচ্ছি না, সেই শর্তাবলী যদি পালিত হয়, আমরা এটাতে অবশ্যই সহযোগিতা করব, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অবশ্যই।’ পাশাপাশি মানবিক করিডোর বাস্তবায়নে সরকার রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, সবার জন্য সমানভাবে ত্রাণ বিতরণ, শর্তহীন ত্রাণ বিতরণের শর্ত দেয়। এসব শর্ত না মানলে মানবিক করিডোর দিতে রাজি নয় বাংলাদেশ এটিও জানিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার; মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি
মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে ভারতীয় মিডিয়া কাল্পনিক সব বয়ান উপস্থাপন করে চলেছে। বাংলাদেশ বিষয়ে অন্যান্য বিষয়ের মতো এই ইস্যুতেও নানা রটনা এবং রঙ মাখানো গল্পের ছড়াছড়ি। একতরফভাবে সংঘবদ্ধ এসব অপপ্রচারকে অনেকেই ‘তথ্য সন্ত্রাস’ হিসেবেই অভিহিত করছেন। এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয় দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও। ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে।’

তবে রোববার (০৪ মে) দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) অডিটরিয়ামে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক সেমিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘মানবিক করিডোরের’ নামে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়াবে না বাংলাদেশ; বরং এ নিয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা নিছকই অপতথ্য ও গুজব।’ তিনি একাধিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি আমেরিকার পক্ষে প্রক্সি যুদ্ধ করতামও, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হত কে? চীন। তাহলে চীন কিছু বলছে না কেন? কেন অন্য একটা স্থান থেকে অপতথ্য আসছে? যেভাবে আমরা বাংলায় একটা কথা বলি, ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’, ভারতের দিকে ইঙ্গিত করেই এমনটি বলেন তিনি।

  • রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার
    মো. তৌহিদ হোসেন
    উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে ‘গুজব ও অপতথ্য’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়ে সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি বাংলাদেশের শ্রদ্ধাবোধ অব্যাহত আছে। আমি আমার আগের আলোচনায় যেভাবে বলেছি, সেটা এখনও অব্যাহত আছে। আমরা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাকে সমর্থন করি না এবং আমরা তোমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে শ্রদ্ধা করি।’

মানবিক করিডোর নিয়ে কোনো ‘আলোচনা না হওয়ার’ কথা তুলে ধরে তিনি বিষয়টিকে স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনা করিনি। মানবিক করিডোর নিয়ে আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি। কোনো পক্ষের সঙ্গেই এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি।’ মিয়ানমারের ত্রাণ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কোন পর্যায়ে আছে, নিজের আগের সংবাদ সম্মেলনে সেটি খোলাসা করা হয়েছে বলে জানান খলিলুর রহমান।

রোহিঙ্গাদের একত্রীকরণ নয় বরং প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান বলে মনে করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই মৃতপ্রায় বিষয়টিকে বিশ্বের কাছে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, রোহিঙ্গারা অবশ্যই ফিরে যাবে-এটাই আমাদের বিশ্বাস। আমরা মনে করি, তাদের ফিরে যাওয়ার একটি পথ আমরা খুঁজে পাবো। এটা সহজ হবে না, কিন্তু আমরা এটি বাস্তবায়ন করবো।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দেখছেন না পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা ফিরে যাবে। মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ, দেশটির অভ্যন্তরে বিভক্তি এবং বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তার অব্যাহত অনুপস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা এখনো সুদূর পরাহত।’

তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কটের আমরা এখনও একটি কার্যকর সমাধান খুঁজে পাইনি। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো অধিকার, অন্যটি নিরাপত্তা। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে না। তবে আমরা কোনো অযৌক্তিক প্রত্যাশায় নেই। যেই নির্যাতন থেকে তারা বাঁচতে চেয়েছিল, আমরা কি তাদের সেই জায়গায় ফেরত পাঠাব?

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দেখছেন না উপদেষ্টা। তিনি বলেন, মিয়ানমারে অবশ্যই বাস্তব পরিবর্তন আনতে হবে। সেই পরিবর্তনের নিশ্চয়তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে। যদিও এটি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ঐক্যবদ্ধ না হলে এটা সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্যান্য বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর থেকে মনোযোগ যেন সরে না যায়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ থাকা দরকার বলেও মনে করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে গুরুত্ব সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও’র
এই সেমিনারের মূল লক্ষ্য ছিল বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের আলোচনা ও অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তার ওপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কৌশলগত প্রভাব ও এর চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতপূর্বক বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে করণীয় ও সুপারিশ নির্ণয় করা। সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব-উল আলম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির প্রভাব ও সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের সরকারি কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির জটিলতা তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সমন্বিত সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

  • যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ‘প্রক্সি ওয়ারে’ জড়াবে না বাংলাদেশ
    খলিলুর রহমান
    জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
    অন্তর্বর্তী সরকার

রোহিঙ্গাবিষয়ক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. সাহাব এনাম খান। এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ডাইরেক্টর আবু সালাহ মো. ইউসুফ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান তালুকদার বিইউপি প্যানেল আলোচক হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

পরে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের সভাপতি এম হুমায়ুন কবির সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনা ও সারাংশ সেশন পরিচালনা করেন; যেখানে অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত তাদের মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

সেমিনারের আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করলেও বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার বিষয় উঠে আসে, যার মধ্যে রয়েছে— রাখাইন অঞ্চলের বর্তমান অস্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আরাকান আর্মির অনিশ্চিত অবস্থান এবং ভৌগোলিক রাজনীতির বিভাজন। বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতি, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সংমিশ্রণে একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণের বিষয়ে বক্তারা আহ্বান জানান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করে প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনকে স্থিতিশীল করা, বৈশ্বিক অঙ্গীকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব পক্ষের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। সেমিনারটি রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে সামরিক ও বেসামরিক প্রাঙ্গণে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

কালের আলো/এমএএএমকে