এলজিপির দাম কমলেও প্রভাব পড়ে না ভোক্তার ওপর
প্রকাশিতঃ 5:58 pm | May 04, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
নতুন করে ঘোষণা করা হয়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য। চলতি মে মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে এলপি গ্যাসের দাম কমানো হয়েছে। ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১৯ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪৩১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন যা ছিল এক হাজার ৪৫০ টাকা। রোববার (৪ মে) বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই দাম ঘোষণা করা হয়। এদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরামকোর এপ্রিল মাসের ‘সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস’ (সিপি) অনুসারে ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এদিন সকাল থেকেই গুঞ্জন ছিল এবার এলপিজির দাম বাড়বে, না কমবে? ভোক্তারা বলছেন, এলজিপির দাম কমলে ভোক্তাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না সিন্ডিকেটের কারণে। আর দাম বাড়লেই তা ভোক্তার কাঁধে নানা দিক দিয়ে চেপে বসে।
জানা যায়, বাংলাদেশে এলপিজি একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি উৎসে পরিণত হয়েছে গত এক দশকে। গ্রামাঞ্চলে জ্বালানির বিকল্প হিসেবে, শহরে রান্না ও বাণিজ্যিক কাজে এবং যানবাহনে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এলপিজি। বর্তমানে দেশের দুই কোটির বেশি পরিবার এলপিজির ওপর নির্ভরশীল।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে বিইআরসি মাসভিত্তিক এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে। সৌদি আরামকোর ‘সিপি’ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম নির্ধারণের একটি মানদণ্ড, যার ওপর ভিত্তি করে আমদানিকারক দেশগুলো তাদের নিজস্ব বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাত প্রায় সম্পূর্ণভাবে এই সৌদি সিপির ওপর নির্ভরশীল। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সামান্য পরিবর্তনও সরাসরি প্রভাব ফেলে দেশের অভ্যন্তরীণ দামে।
এলপিজির মূল্য পরিবর্তন মানেই সরাসরি প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনে। একটি গৃহস্থ পরিবার মাসে গড়ে ১-২টি ১২ কেজি সিলিন্ডার ব্যবহার করে। সিলিন্ডারের দাম ২০-৩০ টাকা বাড়া বা কমা মানে সেই পরিবারের বাড়তি ব্যয় বা সাশ্রয়। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের আয়ের সিংহভাগ চলে যায় দৈনন্দিন খরচে, তাদের ওপর এ ধরনের দাম বৃদ্ধি বাড়তি চাপ তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যখন অন্য খাতে ভর্তুকি কমাচ্ছে বা তুলছে, তখন জ্বালানির ওপর চাপ বেড়ে যায়। এলপিজির দাম বাড়লে একদিকে রান্না খরচ বাড়ে, অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচও বাড়ে। এর প্রভাব পড়ে পণ্যের মূল্যস্ফীতিতে।
১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমেছে ১৯ টাকা
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১৪৯১ টাকা, ১৫ কেজির দাম ১৭৮৯ টাকা, ১৬ কেজির দাম ১৯০৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২১৪৬ টাকা, ২০ কেজির দাম ২৩৮৫ টাকা, ২২ কেজির দাম ২৬২৩ টাকা, ২৫ কেজির দাম ২৯৮১ টাকা, ৩০ কেজির দাম ৩৫৭৭ টাকা, ৩৩ কেজির দাম ৩৯৩৫ টাকা, ৩৫ কেজির দাম ৪১৭৩ টাকা এবং ৪৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩৬৬ টাকা।
এর আগে এপ্রিল মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম অপরিবর্তিত রেখে নির্দেশনা জারি করে বিইআরসি। এছাড়া গত ৩ মার্চ ওই মাসের জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ২৮ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১৯ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক হাজার ৪৭৮ টাকা।
কমানো হয়েছে অটোগ্যাসের দামও। মে মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের দাম ৬৬ টাকা ৪১ পয়সা কমিয়ে ৬৫ টাকা ৫৭ পয়সায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) মো. আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য (গ্যাস) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য (পেট্রোলিয়াম) ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া এবং সদস্য (বিদ্যুৎ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার।
কালের আলো/এমএএইচএন