আইএমএফের ঋণ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিতঃ 9:43 am | May 04, 2025

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, কালের আলো:

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সহ বেশ কয়েক শর্ত পূরণ না হওয়ায় ঋণ প্রক্রিয়াটি আটকে যাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বাংলাদেশ। তাদের ঋণ না নিয়েও আমরা চলতে পারব। এসব কারণে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক প্রশ্ন ও ঋণ না পাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

শনিবার (৩ মে) রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন,

‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণ ছাড়ে অতিরিক্ত শর্ত আরোপ করলে বাংলাদেশ সরে আসবে। আইএমএফ যদি অতিরিক্ত শর্ত দেয়, তবে বাংলাদেশ আর এই ঋণ নিতে আগ্রহী থাকবে না। কারণ সব শর্ত মানতে গেলে দেশের অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।’

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র বসন্তকালীন সভায় যোগ দিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গভর্নর সহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। গত ২১শে এপ্রিল থেকে ২৬শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই সভার অবসরে আইএমএফ’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠকে বসেন উপদেষ্টা ও গভর্নরসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

অন্যদিকে বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা শুধু আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক এর সঙ্গে কথা বলিনি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার শুধু আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেনি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকার শুধু আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেনি। অন্যান্য সব পক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছে। আইএমএফ’র সঙ্গে এখনও শর্ত মেলেনি। কঠোর দর কষাকষি হচ্ছে। চেষ্টা চলছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয় বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ-এ ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। ডলার মার্কেট পুরোপুরি বাজারভিত্তিক না করায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকও ডলারের দাম পুরোপুরি বাজামুখি করতে রাজি নয়। একাধিকবার গভর্নর এই কথা মিডিয়ার সামনে বলেছেন। এখন বাজারের ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দিলে ডলারের দাম ১৫০ টাকায় উঠে যেতে পারে। তাহলে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাছাড়া বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সফররত আইএমএফ দলের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন। কিন্তু আগের সরকারের আমলে সেই চিত্র ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। আগের সরকার ঋণ পাওয়ার জন্য যেকোনো শর্ত পালন করার জন্য ‘স্যার স্যার’ করত ও রাজি হয়ে যেত। আর এখন বাংলাদেশ বলছে প্রতি মাসে তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাচ্ছি আমরা। আর মাত্র ৪৭০ মিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য দেশের বারোটা বাজাতে দেব না।

জানা যায়, বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা ছিল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু তখন তা পাওয়া যায়নি।  চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করতে গড়িমসি করছে আইএমএফ। তবে জুন মাসে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একত্রে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ। অথচ শ্রীলঙ্কার ঋণের কিস্তি ছাড় করতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। সবকিছু ঠিক থাকলে আইএমএফের পঞ্চম কিস্তির ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার পাবে শ্রীলঙ্কা। গত শুক্রবার তা শ্রীলঙ্কার কিস্তি পাওয়া নিয়ে আইএমএফ’র ওয়েবসাইটে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার।

কালের আলো/এমএএইচএন