খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস
প্রকাশিতঃ 9:43 pm | May 03, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
চার মাস চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রথমে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট হয়ে সোমবার (০৫ মে) সকালে ঢাকায় পৌঁছার কথা বলা হলেও পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ রয়্যাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই দেশে ফিরছেন তিনি। তবে তার যাত্রার সময় এখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে শনিবার (৩ মে) বিকেলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে মির্জা ফখরুল এ তথ্য জানান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, ‘বিমানবন্দর থেকে গুলশানের ফিরোজা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা নেত্রীকে স্বাগত জানাবেন। এক হাতে দলীয় পতাকা, অন্য হাতে ফুল নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে।’ দলীয় সূত্র জানায়, অভ্যর্থনার জন্য মূল দায়িত্বে থাকবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। পাশাপাশি যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে সোমবার (৫ মে) যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার। তার দেশে ফেরার আগেই ওই ফ্লাইট থেকে দুজন কেবিন ক্রুকে সরিয়ে দিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। ওই দুই কেবিন ক্রু হলেন আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম।
বিমানের প্রশাসন বিভাগ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কেবিন ক্রু আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আছে। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
- সড়কের দুইপাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাবেন
- এক হাতে থাকবে দলীয় পতাকা আর অন্য হাতে ফুল
- দলীয় প্রধানের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
- শাশুড়ির সঙ্গী হয়ে ১৭ বছর পর দেশে ফিরবেন ডা. জুবাইদা
দলের চেয়ারপারসনের আগমন ঘিরে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, বিমান বন্দর থেকে গাড়িতে করে ৮ নম্বর গেট দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর গুলশানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এ সময় বিমান বন্দর মোড় থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে তাদের নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন। সাধারণের চলাচলের জন্য ওইদিন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত মূল সড়ক এড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারেরও অনুরোধ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, গত ৮ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে যান চিকিৎসার জন্য। চারমাস যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে, ভালো পরিবেশ ও পরিবারের সঙ্গে থাকাসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা হওয়ায় তিনি অনেকটা সুস্থবোধ করছেন, তাই তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল জানান, রোববার হিথরো বিমান বন্দর ছাড়ার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। বিমান বন্দরে মাকে বিদায় জানাবেন জ্যেষ্ঠ সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সফর সঙ্গী হিসেবে থাকবেন তার দুই পুত্রবধূ। যৌথসভায় দলের মহাসচিবের সভাপতিত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস থাকলেও সাক্ষাৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
দলটির একজন নেতা বলেন, ‘চার মাস ধরে নেত্রী বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার ফিরে আসা আমাদের কাছে শুধু রাজনৈতিক ঘটনা নয়, আবেগেরও বিষয়।’ বিএনপি নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নেত্রী দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাই শারীরিক দিক বিবেচনায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এখনই নাও হতে পারে। তবে উপস্থিতি আর শুভেচ্ছার মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করাই হবে বড় ঘটনা। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা ও অভ্যর্থনার সমন্বয় করছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেএম শামসুল ইসলাম শামস। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
শাশুড়ির সঙ্গী হয়ে ১৭ বছর পর দেশে ফিরবেন ডা. জুবাইদা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন দুই পুত্রবধূও। তবে তাদের মধ্যে ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখবেন বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। একে একে এতটা বছর পর দেশে ফিরতে না পারা তারেক রহমানের পত্নীর আগমনকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত।
স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ডা. জুবাইদা রহমান। এরপর কেটে গেছে ১৭টি বছর। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে ছিলেন। অবশেষে শাশুড়ি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরছেন জুবাইদা রহমান।
জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সিলেটের মেয়ে জুবাইদা রহমানের বাবা প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে জুবাইদা রহমানের বিয়ে হয়। ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে তিনি স্বামী তারেক রহমানের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আসেন।
এদিকে, দেশে ফেরার পর জুবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চার স্তরের নিরাপত্তা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গত ৩০ এপ্রিল দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্য এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে ডা. জুবাইদা রহমানের জীবনে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে ধানমন্ডিতে তার পৈতৃক বাসভবন ‘মাহবুব ভবনে’ থাকবেন। চিঠিতে ডা. জুবাইদা রহমানের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারটি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ একজন সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগের সঙ্গে গাড়িসহ পুলিশ প্রটেকশন চেয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া বাসায় পুলিশ প্রহরা এবং বাসার প্রবেশপথে আর্চওয়ে স্থাপনের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।
কালের আলো/আরআই/এমএসএএকে