বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার প্রত্যয়ে দ্বিধাহীন বিমান বাহিনী, সক্ষমতা দেখালো আকাশ প্রতিরক্ষায়
প্রকাশিতঃ 10:24 pm | April 27, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
আকাশ যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল অনুশীলন করছেন বিমান সেনারা। অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমানের মাধ্যমে আক্রমণ, শত্রুবিমান শনাক্তকরণ, আকাশ থেকে শত্রু কবলিত স্থান পর্যবেক্ষণ, রসদ সরবরাহ, সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র স্থানান্তর, বিশেষ অপারেশন, অনুসন্ধান ও উদ্ধারসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জামের কার্যক্ষমতাও পরীক্ষা করা হচ্ছে সমান তালে ও গতিতে। বছরের সবচেয়ে বড় এই প্রস্তুতি বার্ষিক মহড়া ‘আকাশ বিজয়’ এর মাধ্যমে নিজেদের পুরোদমে ঝালাই করে নিচ্ছে বাহিনীটির নির্ভীক সদস্যরা। দেশের সব প্রধান ঘাঁটি, বিভিন্ন স্টেশন ও ইউনিটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মহড়া।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দিনমান বার্ষিক এই মহড়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তিনি ঢাকায় এয়ার কমান্ড অপারেশন সেন্টার (এসিওসি), এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার (এডিওসি), বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার, বিমান বাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার, চট্টগ্রামে বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক ও যশোরে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানে বিভিন্ন প্রকার বিমানের মহড়া সরেজমিন পরিদর্শন করেন। অবলোকন করেন বিভিন্ন অপারেশনাল ও মেইনটেন্যান্স কার্যক্রমও। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও প্রদান করেন। বার্ষিক এই মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শক্তিমত্তা যাচাই ও বিদ্যমান সমরাস্ত্রের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে দুর্বল দিকসমূহ নির্ণয় করতে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
- আকাশ যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল অনুশীলন করছেন বিমান সেনারা
- আকাশ পথে অপ্রতিরোধ্য বিমান বাহিনী শত্রুকে মোকাবিলায় সর্বদাই সজাগ
- বার্ষিক এই মহড়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রধান
- যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী
জানা যায়, ৫৪ বছর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে মাত্র তিনটি পুরনো বিমান নিয়ে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এখন একটি সুসংগঠিত ও পেশাদার বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধ বিমান, সুপরিসর পরিবহন বিমান, আধুনিক হেলিকপ্টার, আনম্যান্ড এয়ার ভেহিকেল, বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম।
বিমান বাহিনীকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে নতুন নতুন স্থাপনা ও যুদ্ধ উপকরণ সংযোজন অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিমান বাহিনীর ৭১ নম্বর স্কোয়াড্রনে স্থাপিত জিএম ৪০৩ এম আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডারের উদ্বোধন করেছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিমান বাহিনীকে পঞ্চম জেনারেশনে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেই এগোচ্ছেন বিমান বাহিনী প্রধান। দেশের আকাশসীমার ওপর যে কোনো হুমকি মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলেও একাধিকবার তিনি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে বরাবরই নিজেদের অনুশীলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষার কাণ্ডারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। প্রতি বছরই তাঁরা বার্ষিক মহড়ার মাধ্যমে নিজেদের অপারেশনাল সক্ষমতার বিষয়টি জানান দেয়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। ‘আকাশ বিজয়- ২০২৫’ নামের চলতি বছরের বার্ষিক মহড়াটি শুরু হয়েছে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল)। বিমান বাহিনীর সব প্রধান ঘাঁটিসহ সিলেট, লালমনিরহাট, শমশেরনগর, বগুড়া, বরিশাল, রসুলপুর ও সুধারামে অবস্থিত বিভিন্ন স্টেশন ও ইউনিটসমূহ থেকে সারা দেশে ওইদিন থেকে মহড়া পরিচালিত হচ্ছে। এটি শেষ হবে আগামী বুধবার (৩০ এপ্রিল)।
জানা যায়, আকাশ পথে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী শত্রুকে মোকাবিলায় সর্বদাই সজাগ। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখতে জীবনবাজি রেখে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছেন অকুতোভয় যোদ্ধারা। রনাঙ্গণে নিজেদের যে প্রস্তুতি তাতে শান দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বার্ষিক এই মহড়ার মাধ্যমে তারই টুকরো টুকরো ছবি আঁকছেন বিমান বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন দেশের সার্বভৌমত্ব ও বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার প্রত্যয়ে তাঁরা দ্বিধাহীন।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এই মহড়ায় বিমান বাহিনীর সকল ধরনের যুদ্ধ ও পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার ইউনিট, র্যাডার ইউনিট, মিসাইল ইউনিট এবং আনম্যান্ড এরিয়াল সিস্টেম ইউনিট সর্বাত্মকভাবে অংশগ্রহণ করছে। মহড়ায় বিমান বাহিনীর বিভিন্ন র্যাডার স্কোয়াড্রনের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের আক্রমণকে চিহ্নিত করে নিজ বাহিনীর যুদ্ধ বিমান ও মিসাইল ইউনিটের সহায়তায় সেই আক্রমণকে প্রতিহত করার কৌশল অনুশীলন করছে। আকাশ যুদ্ধ ছাড়াও ভূমিতে ঘাঁটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট সকল কৌশলও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুশীলন করা হচ্ছে।
একই সূত্র জানায়, বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ও কমান্ডো দলের কমব্যাট সার্চ এন্ড রেসকিউ (সিএসএআর) অপারেশন, পরিবহন বিমানের জরুরি রসদ স্থানান্তর, বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহায়তায় বোমা অথবা বিস্ফোরক দ্রব্য শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয়করণের কার্যক্ষমতা যাচাই এবং স্ক্র্যাম্বলের মাধ্যমে আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী শত্রু বিমানকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে এয়ার ডিফেন্স অ্যালার্ট (এডিএ) কর্তব্যরত যুদ্ধ বিমানকে ব্যবহার করা, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি এবং সময় সংবেদনশীল টার্গেটে আক্রমণ ইত্যাদি অনুশীলন করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে আইএসপিআর’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিমান বাহিনী প্রধানের সরেজমিন পরিদর্শনকালে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল জাভেদ তানভীর খান, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) শরীফ উদ্দিন সরকার, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (রক্ষণাবেক্ষণ) এয়ার ভাইস মার্শাল জাহিদুল সাঈদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/এমএএএমকে