৫ উপাদানে গুরুত্ব মতিউর রহমান আকন্দের, ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ফারুকীর
প্রকাশিতঃ 10:55 pm | April 25, 2025

আব্দুল্লাহ আল নোমান, কালের আলো:
ময়মনসিংহ মহানগর ও জেলা জামায়াতের বিশাল কর্মী সম্মেলনে বাংলাদেশে পরিবর্তনের জন্য কমপক্ষে পাঁচটি উপাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. সামীউল হক ফারুকী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা.শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমীর কামরুল আহসান এমরুল ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসন জামায়াত আমীরকে উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন।
দেশে পরিবর্তনের জন্য কমপক্ষে পাঁচটি উপাদান দরকার
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশ ৫৫তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। এই ৫৫ বছরে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারেনি। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। বরং বিগত ৫৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলের ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অর্থনীতিকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। মানুষের সবচাইতে বড় আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে ধ্বংস করা হয়েছে। এখান থেকে সাজানো রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে হত্যা করে বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, কাজের অধিকার, ফান্ডামেন্টাল রাইটস, বেসিক রাইটসহ সবকিছুকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। সাড়ে ১৫ বছর পর আজকে একটি মুক্ত বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। সেজন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি পরিবর্তন চায়। এ পরিবর্তনের জন্য কমপক্ষে পাঁচটি উপাদান দরকার। তার মধ্যে একটি হচ্ছে নেতৃত্ব। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে মানুষ স্বপ্ন দেখে সংগঠিত হয়ে পরিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনেক শুকরিয়া যে আজকে ৫৫ বছর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একজন নেতা পেয়েছে যে নেতার নেতৃত্বে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ একটি ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছে। এই নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা আগামী দিনে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি এবং জামায়াতে ইসলামী সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে পরিবর্তনের জন্য একটি মজবুত সংগঠনের দরকার। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ দেশের সর্ববৃহৎ একটি রাজনৈতিক শক্তি। জামায়াত আগামী দিনে একটি পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিবে এটাই স্বাভাবিক। তৃতীয়টি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে নেতাদের ত্যাগ এবং কুরবানীর মাধ্যমে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের মাটিতে সবচাইতে বেশী রক্ত, সবচাইতে বেশী কুরবানী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর তদানীন্তন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। উপমহাদেশের বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে আটক রেখে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বনন্দিত মুফাসসীরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এত বড় ত্যাগ, এত বড় কুরবানী বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দল অতীতে কোন দিন দেয়নি। সুতরাং জামায়াতের এই ত্যাগ এবং কুরবানীর কারণেই বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনতা আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আগামী দিনে জামায়াতকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নেয়ার লক্ষ্যে।
তিনি বলেন, এরপর আরেকটি জিনিস দরকার- ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ‘কন্ট্রিবিউশন টু দ্যা ন্যাশন’ একটি রাজনৈতিক দলের অবদান। জাতির প্রতি তার অবদান। জামায়াতে ইসলামীর এককভাবে জাতির প্রতি অবদান সবচাইতে বেশী। ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর তদানীন্তন আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষ থেকে আব্বাস আলী খান সাহেব কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এমন একটি পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলো যে পদ্ধতি ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় সমস্ত রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত একমত হয়েছিল কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সুতরাং জাতির প্রতি জামায়াতের এই অবদান। এই অবদানের কারণে আগামী দিনের জনগণ জামায়াতকেই তাদের পছন্দের রাজনৈতিক দল হিসেবে গ্রহণ করে নিবে ইনশাআল্লাহ।
এবার জামায়াত আরেকটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। আপনারা জানেন, আমীরে জামায়াত ৯ অক্টোবর জাতির সামনে এই প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব হচ্ছে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একশত ভাগ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, একদিন বাংলাদেশের জনগণ এই পদ্ধতিও গ্রহণ করে নিবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী যে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমীরে জামায়াত দীর্ঘ কারাবরণ করার পর মুক্ত পরিবেশে ফিরে এসে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যে ডাক দিয়েছিলেন আজকে বাংলাদেশ মুক্ত পরিবেশে আসার পর তিনি তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা লক্ষ্য করছেন, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া বাংলাদেশের এমন কোন জনপদ নেই যেই জনপদে আমীরে জামায়াতের পদধূলি পরে নাই। আমরা ময়মনসিংহ বিভাগের জনশক্তিগণ উনাকে আরও আগেই আনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আজকে অনেক শহীদের রক্তে রঞ্জিত শহীদ মঞ্জুরুল কবির, শহীদ কামরুল আহসান, শহীদ শওকত হোসেন তালুকদার, শহীদ আলাউদ্দিন, শহীদ কামারুজ্জামানের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশে আমীরে জামায়াত আজকে আগমন করেছেন। উনার এই জনসভায় এই কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী দিনে আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশের এই অংশের ময়মনসিংহের পাঁচটি জেলায় আমরা আমাদের দাওয়াতী তৎপরতা ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে আগামী দিনের পরিবর্তনের নেতৃত্বের অংশীদার হতে চাই। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন।’
ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ফারুকীর
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. সামীউল হক ফারুকী বলেন, ‘১৭ বছরের বৈষম্য, নির্যাতন-জুলুমের অবসান ঘটিয়ে ৫ আগস্টের একটি সফল বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের সূচনা করা সম্ভব হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা এতোদিন কথা বলতে পারিনি। আমাদেও কথা বলার সুযোগ ছিল না। আমরা স্বৈরাচারকে হটাতে সক্ষম হয়েছি। এদেশে ইসলামের কথা অবাধে বলার সুযোগ আল্লাহ তৈরি করে দিয়েছেন। এখন অন্তর্বর্তী সময় চলছে, এরপর দেশে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জনগণ রায় দেবে কারা এদেশ শাসন করবে। আগামী দিনে যে নির্বাচন হবে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীরের নেতৃত্বে এদেশে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কল্যাণ হবে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে, জুলুমের অবসান ঘটবে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলে মানবিক সমাজ কায়েম হবে, যেখানে মানুষ তাঁর মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। জামায়াত ইসলাম ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, লুটপাট ও সন্ত্রাস থাকবে না। একটি জননিরাপত্তামূলক রাষ্ট্র কায়েম জামায়াতের লক্ষ্য। সকল দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু সম্মেলন বা বক্তব্য দিলে হবে না ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। এই সম্মেলন থেকে আমরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বো। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জনমত তৈরির জন্য আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিবো।’
ময়মনসিংহের ১১টি আসন উপহার দিতে চান এমরুল
কর্মী সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমীর কামরুল আহসান এমরুল বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। আমরা এই সম্মেলন থেকে আমীরে জামায়াতকে ময়মনসিংহের ১১টি আসন উপহার দিতে চাই। এজন্য আমাদের কর্মী ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে। নেতা হিসেবে নয়, জনগণের সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষ চাচ্ছে, আগামী দিনে আমীরে জামায়াতকে আমরা ময়মনসিংহের ১১টি আসন উপহার দিতে পারবো বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
কালের আলো/এমএএন/এমএএএমকে