দেড় লাখ ইভিএমের কী হবে?

প্রকাশিতঃ 3:23 pm | April 11, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে আর এগোবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা আগেই জানিয়েছে, ইভিএমে আর ভোট হবে না। আবার ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে ৯ মাস আগে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় দেড় লাখ ইভিএমের কী হবে?

কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইভিএমগুলো বুঝে নেবে ইসি। আপাতত সেগুলো সংরক্ষণ করা হবে। এরপর কী হবে, তা কেউ জানে না।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘প্রকল্প তো শেষ। আর প্রত্যেকটা জিনিসেরই একটা লাইফটাইম রয়েছে। হাজার কোটি টাকার ইভিএমের ভবিষ্যত কী হবে এটা সময়ই বলবে।’

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হস্তান্তরের প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখে অপেক্ষা করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত চারটি কমিটিও কাজ করেছে। কিন্তু সেই কাজে ধীরগতিতে আটকে আছে হস্তান্তর।

এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য কমিশন সভা বা সমন্বয় সভা করার অনুরোধ জানিয়েছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গত নভেম্বরে যোগ দিয়ে পাঁচ মাস পার করেছে। এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি ‍শুরু হয়ে গেছে।

কমিশন বলেছে, আগামী সংসদ নির্বাচন প্রচলিত ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ইভিএমে ভোট প্রক্রিয়া বাতিলের সুপারিশ করেছে।

ইভিএমে ভোট না নিলেও দেড় লাখ ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে প্রকল্প থেকে তা বুঝে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় গত ১২ জানুয়ারি নতুন ইসির দ্বিতীয় কমিশন সভায়।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সেদিন বলেন, ‘আমরা জরুরি ভিত্তিতে এটার দায়-দায়িত্ব বুঝে নেব, রক্ষণাবেক্ষণ করব। এসব ইভিএম আর ব্যবহৃত হবে কি হবে না, ভবিষ্যতে সে সিদ্ধান্ত হবে।’ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান বাতিল করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছিল যে ছয় আসনে, তার ভোটার উপস্থিতির হার এবং ব্যালট পেপার ব্যবহার করা আসনগুলোর ভোটার উপস্থিতির হারের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য পার্থক্য’ দেখা যায়। এ পার্থক্য নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ভোটের হার নিয়ে সন্দেহ এবং বিতর্কের জন্ম দেয়।

কমিশন বলেছে, ‘ইভিএমের এই সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনায় নিয়ে এবং বিভিন্ন অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায়, ইভিএম অনিরাপদ এবং স্বচ্ছ ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নয়। এটি নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তোলে। এই বাস্তবতায়, আপাতত ইভিএম ব্যবহার পরিহার করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হচ্ছে।’

সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিন ১১ জানুয়ারি সিলেটে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হবে না, এটা স্পষ্ট। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’

কালের আলো/এমএএইচএন