ঘুরে দাঁড়ালেন রওশন, চাঙ্গা জাতীয় পার্টি!

প্রকাশিতঃ 5:34 pm | March 24, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো:

দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদে পালন করেছিলেন বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব। দেশের একমাত্র বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে তিনিই প্রথম সংসদ বর্জন না করার নজির রেখেছেন। স্থাপন করেছেন সরকারকে সহযোগিতার দৃষ্টান্তও।

নিজে যেমন সরকারকে ভালো কাজে সাধুবাদ জানিয়েছেন তেমনি ‘গঠনমূলক ভূমিকার’ জন্য পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাও। এক মঞ্চে দু’জন পাশাপাশি বসেছেন অনেকবার। গত সংসদেও উপস্থিতির দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পরেই ছিলো তাঁর অবস্থান।

বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও ২৪২ কার্য দিবস উপস্থিত থেকেও ইতিবাচক রাজনীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেন বেগম রওশন এরশাদ। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বদলে যায় সব হিসাব-নিকাশ।

সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে এইচ এম এরশাদ নিজেকে একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন। উপনেতার দায়িত্ব তুলে দেন ছোট ভাই ও দলীয় কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাঁধে।

‘স্বামী ভক্ত’ রওশন এরশাদ মাথা পেতে নেন এমন সিদ্ধান্ত। ফলে শুধুমাত্র ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পদ ছাড়া সব রকমের স্ট্যাটাস হারান সদ্য সফল বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রওশন এরশাদ। অবশ্য এই নিয়ে তাঁর কোন ‘মাথাব্যাথা’ ছিলো না।

কিন্তু নিজের শারীরিক অবস্থার ভগ্নদশা, কো চেয়ারম্যান ও উপনেতা হিসেবে জি এম কাদেরের ব্যর্থতা, উপজেলা নির্বাচনে দলকে টেনে তুলতে না পারা, দলটির সিনিয়র নেতাদের ঐক্যবদ্ধ না করে বরং তাদের সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্বসহ ইত্যাকার কারণেই আবারো নিজের অবর্তমানে ‘জীবনসঙ্গী’ রওশনের ওপরই চূড়ান্ত আস্থা রাখেন রাজনীতিতে ‘পল্লীবন্ধু’ তকমা পাওয়া একাদশ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ।

শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে দলটির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা মনোনীত করে তিনি স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। এর ফলে মাত্র ১৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুই পদ খোয়ানোর মধ্যে দিয়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতি থেকেও রীতিমতো ‘ছিটকে’ পড়েছেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

আর দলীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা ও দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যকার বন্ধন মজবুত এবং বিভেদ-কোন্দল দূর করতে দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সময়োপযোগী এমন সিদ্ধান্ত প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

জানা যায়, দশম জাতীয় সংসদে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ফলে সঙ্কটময় মুহুর্তে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার স্বার্থে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের কাতারে নিয়ে আসেন বেগম রওশন এরশাদ।

ফলে তাঁর সঙ্গে বরাবরই গভীর হৃদ্যতা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও রওশন এরশাদের ধীর-স্থির মনোভাব এবং নীতিতে অটল থাকায় তাকে পছন্দ ও বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী।

গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক ভরাডুবির মুখেও রওশনের কারিশ্মায় ২২ টি আসনে জিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিলো রওশনই দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলীয় নেতার আসন অলংকৃত করবেন। কিন্তু এরশাদ বেঁকে বসে নিজেই এই দায়িত্ব নিতে চাওয়ায় নীরবেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন স্ত্রী রওশন এরশাদ।

অবশ্য প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ দিনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে সংসদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে সব মহলে প্রশংসা কুড়ান রওশন এরশাদ। নিজ বক্তৃতায় সেদিন স্বামীর সুস্থতার জন্য দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে ‘মমতাময়ী’ হিসেবেও ফোকাস করেন।

উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের। একাদশ সংসদে আবারো এমন বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি জনপ্রত্যাশিত শব্দমালা উচ্চারণ করে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পজেটিভ ‘ভাইরাল’ হন রওশন এরশাদ।

বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর কালের আলো’র সঙ্গে আলাপকালে রওশন এরশাদ বলেন, দশম জাতীয় সংসদে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারার সূত্রপাত করেছিলো জাতীয় পার্টি। আমরা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছি আবার ইতিবাচক কাজের বা সাফল্যেরও প্রশংসা করেছি। আমরা এই সংসদকেও গতিশীল ও প্রাণবন্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই।

কালের আলো/এএ/ওএইচ

Print Friendly, PDF & Email