বিশ্বের বুকে সমুন্নত লাল-সবুজের পতাকা, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন পিএসও

প্রকাশিতঃ 10:53 pm | February 07, 2025

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

বিশ্বে শান্তির প্রশ্নে তাঁরা উন্নত মমশির। টানা ৩৬ বছরের দীর্ঘ পথচলায় দেশে দেশে শান্তি ফেরাতে দুর্গম রুক্ষ আর বন্ধুর সব প্রান্তরে অজস্র বিনিদ্র রাত আর রক্ত-ঘাম ঝরা দিন কাটিয়েছেন বাংলার শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের বুকে সমুন্নত রেখেছেন লাল-সবুজের পতাকা। অর্জন করেছেন বিশ্বের বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের গৌরব-মর্যাদা। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি-বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারকে বিশ্বমঞ্চে পুনর্ব্যক্ত করেছেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।

ইউএন পিসকিপিং মিনিসটেরিয়াল-এর দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থাপন করেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিজ দেশের ৩৬ বছরের অভিজ্ঞতার গল্প। জানিয়ে দিলেন জাতিসংঘের এই কার্যক্রমে সাহস, দৃঢ়তা, শৃঙ্খলা, আত্মত্যাগের ব্রত আর মানবিকতায় বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গৌরবময় ভূমিকার কথা। অনেক স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে অমলিন দিনগুলোর বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন বিশ্বমঞ্চে। স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন না হয়েই পরিপ্লুত সেসব দিন ও ক্ষণের কথা উচ্চারণ করলেন।

বিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেদের। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহ-আয়োজক হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় এই দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক এই মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে মনে করেন আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউএন পিসকিপিং মিনিসটেরিয়াল বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ কৌশল ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফোরামে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের প্রধান কণ্ঠস্বর। বিশ্ব শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী অন্যান্য দেশ ও নিজেদের মধ্যে এক অবিভাজ্য মেলবন্ধন গড়ে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ কৌশল ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।

বিশ্বশান্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জনকারী শান্তিরক্ষীদের আত্মত্যাগ তিনি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বীরত্বপূর্ণ সাহসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশে দেশে সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করেছেন দেশর ভাবমূর্তিকে-সবকিছুই ওঠে আসে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ৪ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউএন পিসকিপিং মিনিসটেরিয়াল ২০২৫’র দ্বিতীয় প্রস্তুতিমূলক সভায় অংশগ্রহণ করেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল ক্যাথারিন পোলার্ডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পারস্পরিক মতবিনিময় করেন। এতে করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্যোগে সংকট মোকাবিলায় এমনিতেই বিকল্পহীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী। আবার বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও বড় অনুপ্রেরণার নাম হয়ে ওঠেছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। ১৯৮৮ সালে ইরাক শান্তি মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনাসদস্যের যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে শুভযাত্রার সূচনা হয়েছিল; সংখ্যা ও গুণগত দিক থেকে ৩৭ ছুঁই ছুঁই সময়ে তাঁর বহুল বিস্তৃতি উৎসাহব্যঞ্জক। শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩টি দেশ ও স্থানে ও ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করেছে। প্রমাণ করেছে তাঁরা সেরাদের সেরা।

কালের আলো/এমএএএমকে