বিভাগ পর্যায়ে ২০০ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র ও দুই বিভাগে কেমিক্যাল ল্যাব করছে ডিএনসি

প্রকাশিতঃ 6:49 pm | March 21, 2019

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :

দীর্ঘ চাকরি জীবনে ব্যর্থতা কখনো স্পর্শ করতে পারেনি জামাল উদ্দীন আহমেদকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিজি) এই মহাপরিচালক আশাবাদী একজন মানুষ। বিভিন্ন পদে কাজ করার সময় মাদকের বিরুদ্ধে কঠিন অভিযান চালিয়েছেন। কখনো আপোস করেননি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নিয়ে যখন নানা কথা হচ্ছিলো তখন প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন রূপে ঘুরে দাঁড় করাতে তাঁর কাঁধেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) দায়িত্ব তুলে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্ন শুধু দেখাই নয়, বাস্তবায়ন করা এই মহাপরিচালক অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিভাগ পর্যায়ে নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দু’টি কেমিক্যাল ল্যাব স্থাপন করার কথা জানান।

আরো পড়ুন:
দেশকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার ডিজি জামাল উদ্দীনের

কালের আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রকে প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ ২৫০ বেডে উন্নীত করার জন্য প্রস্তাব করেছি। এই প্রকল্প প্রস্তাব ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে।

তাঁর ভাষ্যে- ‘বিভাগ পর্যায়ে ২০০ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আমাদের আরো পরিকল্পনা রয়েছে বৃহত্তর জেলাগুলোতে ও পরবর্তীতে সব জেলাতেই একটি করে নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার।’

সম্প্রতি এক বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কালের আলোকে এসব তথ্য জানান জামাল উদ্দীন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশজুড়ে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই। দেশের সব জেলাতে ওয়্যারলেস সেট সরবরাহ করে ব্যবহার শুরু হলেও ন্যাশনওয়াইড কানেকটিভিটি প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি।

নতুন ডিটেকটিং মেশিন সংগ্রহ করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ শুরু ও নিজস্ব গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আরো শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে লোকবল ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

অধিদপ্তরের ৩৭টি সেবা অনলাইনে সহজলভ্য করার পাশাপাশি ৮টি বিভাগীয় শহরে ডিজিটাল প্রচারণার ব্যবস্থা করা হবে’ যোগ করেন জামাল উদ্দীন।

আরো পড়ুন:
‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ অপবাদ কাটিয়ে উঠছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

দেশের মানুষকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন করতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে অধিদপ্তরের এই মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরণের সভা-সমাবেশ করছি। বিভিন্নভাবে মানুষকে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানান দিচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা হচ্ছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।

মাদকের রাশ টেনে ধরতে কী করা প্রয়োজন, এমন প্রশ্নে জামাল উদ্দীন আহমেদের সোজাসাপ্টা জবাব- ‘মাদক বিরোধী নতুন আইন করা হয়েছে। এই আইনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। সর্বোপরি সংগঠিত সামাজিক আন্দোলন মাধ্যমেই মাদকের রাশ টেনে ধরা সম্ভব।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আগে রেশন না পেলেও এখন পাচ্ছেন। এর ফলে অস্বচ্ছল অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তাদের পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য বেড়েছে। তারা আরো কমিটেড হয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছে, জানান অধিদপ্তরের এই মহাপরিচালক।

প্রসঙ্গত, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বর্ডার গার্ড, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), কোস্টগার্ড ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরের অভিযানে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৯ জন।

আরো পড়ুন:
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাল নিয়ে কালের আলোতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন

অভিযানে জব্দ করা মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে ইয়াবা। এর পরিমাণ ১৬ কোটি ১২ লাখ ৩৭ হাজার পিস। এই ইয়াবা আবার সবচেয়ে বেশি আটক হয়েছে ২০১৮ সালে— ৫ কোটি ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫১ পিস।

এছাড়া অভিযানে হেরোইন আটক হয়েছে ১৮০৫ কেজি। সবচেয়ে বেশি আটক হয় ২০১৭ সাড়ে ৪০১ কেজি। অভিযানে ৪০ কেজি কোকেন, ১৪৪ কেজি আফিম, ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ কেজি গাঁজা, ৭৯ লাখ ৮ আজার ৯৭৮ বোতল ফেনসিডিল, ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ১১০ বোতল বিদেশি মদ, ৯ লাখ ৯০ হাজার ২৬৩ ক্যান বিয়ার ও ১১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯টি অ্যাম্পুল ইনজেকটিং ড্রাগ আটক হয়েছে।

কালের আলো/এএ

Print Friendly, PDF & Email