অভিযুক্ত হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল-জরিমানা
প্রকাশিতঃ 3:15 pm | March 06, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
হাজীদের বিভিন্ন অভিযোগ, প্রতারণার অভিযোগে কমপক্ষে পাঁচটি এজেন্সির হজ লাইন্সেস বাতিল, স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্ত, কারণ দর্শানো ও তিরস্কারের শাস্তি প্রদান করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
২০১৮ সালে পবিত্র হজ পালনের সময় বিভিন্ন এজেন্সি প্রতিশ্রুতি দিয়েও হজযাত্রীদের নির্দিষ্ট মানের ও দূরত্বের বাড়িতে না রাখা, মিনা আরাফায় যানবাহনের ব্যবস্থা না করা এবং পচা বাসি খাবার সরবরাহসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে মৌরি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (লাইসেন্স নং ২৭২) ও আবাবিল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরের (৩৭৮) হজ লাইসেন্স বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
মৌরি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে মুশফিকুর রহমান বাবুল নামে এক হজযাত্রী মক্কার হজ কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগ, অবসবাসযোগ্য একটি বাসায় এক রুমে ১৮ জনকে রাখা হয়। দুই রুম মিলে এক বাথরুম। তিনতলায় পাঁচটি রুম থাকলেও খাবার পানি নেই। ২০ জনের জন্য একটি বাথরুম। খাবারের পরিমাণ খুবই কম। ফলে হাজিরা রোগী হয়ে যাচ্ছে। টাকা না দিলে খাবার দেবে না এবং মদিনায় দেবে না।
অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ৩ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিব্বির আহমেদ ওছমানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে লাইসেন্স বাতিল ও জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা জারি হয়।
একইভাবে আবাবিল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সির বিরুদ্ধে ডা. হারুন উর রশীদ নামে একজন হজযাত্রী মক্কায় হজ কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ করেন, হজ করতে এসে রুমে থাকার কষ্ট করতে হচ্ছে। খেতে গেলে বলা হয় মোয়াল্লেমের কাছে যান। বাসে উঠতে গেলে আপনার জন্য সিট নেই বলে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। প্রথমে ৩ লাখ টাকা বলে পরে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় ৪৫ দিনের প্যাকেজের কথা বলে ৩৮ দিন রাখা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৩ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিব্বির আহমেদ ওছমানী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে লাইসেন্স বাতিল ও জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা জারি হয়।
পটুয়াখালী ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসেসের লাইসেন্স (নম্বর ১০৯৯) সাময়িকভাবে দুই বছরের জন্য বাতিল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আমিনা বেগম নামে একজন হজযাত্রী অভিযোগ করেন, তার স্বামী ইনসান আলী হজে গিয়ে গত বছরের ১৫ আগস্ট প্যারালাইসিসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে কিং আবদুল আজিজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এজেন্সির পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতাই করা হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
রাজধানীর পুরানা পল্টনের আফতাব ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স (নং ০৫৮৪) বাতিল ও জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বগুড়ার জনৈক মো. শরাফত আলী ও তার ছেলে বাকি বিল্লাহ রাজধানীর রামপুরার বেসরকারি হজ এজেন্সি এগারসিন্ধুর ট্রাভেলস লিমিটেডের (লাইসেন্স নং ৭৫০) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে এ এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক নিবন্ধন ও পরবর্তীতে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা জমা দিলেও তাকে জানানো হয়, প্রাক নিবন্ধন ছাড়া আর কিছুই করেননি ফলে তিনি যেতে পারেননি। ওই এজেন্সি টাকা ও পাসপোর্টও ফেরত দেয়নি।
এ কারণে ৫ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিব্বির আহমেদ ওছমানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আগামী ৭ দিনের মধ্যে কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি ও এ সময়ের মধ্যে টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দিতে নির্দেশ দেয় ।
২০১৮ সালে হজ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণকারী মেরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে (লাইসেন্স নং ২৫৩) তিরস্কার ও সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এ এজেন্সির যাত্রী নজরানা ইয়াসমিন (হীরা) মক্কায় অভিযোগ করেন, বাসস্থান ও খাবার ব্যবস্থা খুবই বাজে ছিল। খাওয়ার পানি সরবরাহ করা হয়নি। বাসস্থান এলাকা পরিচ্ছন্ন ছিল না। চারজন নারী হারিয়ে গেলেও তাদের উদ্ধার করা হয়নি। মক্কায় নারী ও পুরুষের আলাদা ব্যবস্থা না করে একই ফ্লোরে রাখা হয়, আরাফার ময়দান থেকে বাসে আনার ব্যবস্থা ছিল না, হাজিদের সঙ্গ দুর্ব্যবহার করা হয়। তদন্তে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগকারী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।
এ কারণে গত ৩ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছিব্বির আহমেদ ওছমানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাদের তিরস্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়।
প্রসঙ্গত, সৌদি আরব ও বাংলাদেশে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এসব ব্যবস্থা নেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
কালের আলো/এমএইচএ