নিদারুণ কষ্টে কে.বি হাইস্কুলের ২৫ শিক্ষক, পেনশন পাওনা ৩ কোটি টাকা
প্রকাশিতঃ 4:48 pm | January 23, 2019

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
প্রায় এক যুগ আগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের (কে.বি হাইস্কুলের) সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেছেন মো: জাকির হোসেন। এককালীন অবসরভাতা বাবদ তাঁর পাওয়ার কথা ১০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। কিন্তু ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি পেয়েছেন ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
আবার ২০১১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৮ হাজার ৮ টাকা করে মাসিক অবসর ভাতা পেয়েছেন এই শিক্ষক। একই সময় পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৮০ টাকা করে আরেক শিক্ষক মিসেস শামছুন্নাহার মাসিক অবসর ভাতা পেলেও এককালীন ১৫ লাখ টাকার মধ্যে সাকুল্যে তাঁর ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ৫ লাখ টাকা।
এই অবস্থা শুধু অবসরপ্রাপ্ত দুই শিক্ষক জাকির হোসেন কিংবা শামছুন্নাহারের নয়। তাদেরসহ মোট ২৫ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের স্কুলটির কাছে অবসর ভাতা হিসেবে পাওনা প্রায় ৩ কোটি টাকা। কিন্তু গত ৮ বছর যাবত কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই এসব শিক্ষকের অবসর ভাতা বন্ধ রেখেছেন স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি।
স্কুল কমিটির এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে জীবনের শেষ বেলাতে এসে নিদারুণ মানসিক ও অর্থনৈতিক কষ্টে ভুগছেন জাতি গঠনের এক সময়কার কারিগররা। এককালীন ও মাসিক অবসর ভাতার টাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কোন কিনারা না হওয়ায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি আদালতের মাধ্যমেই সুরাহা করার কথা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এলাকায় যাত্রা শুরু করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল। ১৯৭৩ সালের ১১ এপ্রিল থেকে এই স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি স্কুলের ফান্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে চলছিলো। এমনকি স্কুলটিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় সব শিক্ষকরাই নিয়মিত বেতন ভাতাদি গ্রহণ করেছেন।
এরপর প্রায় ২৫ জন শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে চাকরির ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর অবসরে যান। এরপর তারা এককালীন ও মাসিক অবসর ভাতা পেয়ে আসছিলেন।
আব্দুস সালাম নামে স্কুলটির অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক জানান, ১৯৯১ সালে স্কুলটির ব্যবস্থাপনা কমিটির ৫০ তম সভায় পেনশন প্রথা প্রবর্তন করতে স্কুলের অর্থনৈতিক কমিটির রিপোর্ট মোতাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সেই সভার বরাত দিয়ে এই শিক্ষক জানান, ওই সভায় ১৯৭৩ সালের ১১ এপ্রিল থেকে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য অবসর ভাতা বাস্তবায়নের জন্য পেনশন গ্রাচুইটি বিধিমালা অনুমোদনের প্রস্তাব ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গৃহীত হয়।
ওই মোতাবেক ২৫ জন শিক্ষক স্কুল থেকে এককালীন অবসর ভাতার আংশিক ও মাসিক নিয়মিত ভাবেই পেয়ে আসছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০১১ সালের মে মাসের দিকে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই অবসরপ্রাপ্ত ২৫ শিক্ষকের এককালীন ও মাসিক অবসর ভাতা বন্ধ করে দেয় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর তাঁরা বার বার স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আবেদন করেও ফল পাননি।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের দিকে তাঁরা পাওনা অবসর ভাতা আদায়ের জন্য হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। প্রায় ৪ বছর মামলা চলার পর ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হতে বলা হয়।
পরবর্তীতে ওই বছরের ১৮ জুন শিক্ষকরা জেলার বিজ্ঞ ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তবে এই ব্যাপারে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাইস্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এ এস মাহফুজুল বারী জানান, এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। হেড মাস্টার এই বিষয়ে কথা বলবেন।’
পরে তাঁর ফোন থেকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ রায়হান উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের পেনশন পাওনার বিষয়টি আদালতে মামলা হয়েছে। তাঁরা হাইকোর্টে রিট করার পর তাদের রিট খারিজ হয়ে গেছে। পুনরায় তারা নিম্ন আদালতে করেছে। এই মামলা চলমান থাকায় আদালতের মাধ্যমেই বিষয়টি সুরাহা হবে।
কালের আলো/এএ