ময়মনসিংহে ‘জনসমুদ্র’ নয় ‘মহাসমুদ্র’; টিম ওয়ার্কে সফল জেলা ও মহানগর আ.লীগ

প্রকাশিতঃ 10:36 pm | March 11, 2023

বিশেষ সংবাদদাতা/অনিক খান, ময়মনসিংহ থেকে :

প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভা। স্বাধীনতার মাস মার্চের শুরু থেকেই প্রতীক্ষায় ছিল শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহ। তবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল আরও প্রায় মাসখানেক আগেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে শুধু নেতাকর্মীরাই নন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার মানুষের ছিল অধীর অপেক্ষা। অবশেষে শনিবার (১১ মার্চ) তাদের প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়।

আরও পড়ুন: ১০৩ টি প্রকল্পের উদ্বোধন কী ধ্বংসের নমুনা?, ময়মনসিংহের জনসমুদ্রে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

এদিন তখনও আলো ফুটেনি ময়মনসিংহ নগরীতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা দুপুর ২ টা থেকে শুরু হবে জানা থাকলেও ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে ভোর থেকেই ভিড় করতে থাকেন লোকজন। ট্রেন, বাস, নৌকা, রিকশা, অটো রিকশা এমনকি ট্রাক চেপেও এসেছেন তাঁরা। যানবাহন না পেয়ে অনেকেই হেঁটে এসেছেন জনসভাস্থলে। এটিই বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য ময়মনসিংহের আপামর জনসাধারণের নিখাদ ভালোবাসার উদাহরণ।

আবার কেউ কেউ আগের রাতেই এসেছিলেন ময়মনসিংহ নগরীতে। শনিবার বেলা বাড়তেই কানায় কানায় ভরে ওঠে সার্কিট হাউজ মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা। একের পর এক আসতে থাকে খন্ড খন্ড মিছিল। মুহুমুর্হু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। জনসভার জন্য চালু করা হয় বিশেষ ট্রেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না গোটা নগরীতে। মাঠে স্থান না পেয়ে অনেকেই নতুন বাজারসহ আশপাশ এলাকায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন।

আরও পড়ুন : উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত ময়মনসিংহ; ১০৩ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর

জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রাম থেকে এসেছেন বয়োবৃদ্ধ শাহজাহান মিয়া (৬০)। রাতভর জেগে থাকলেও ক্লান্তি নেই চোখেমুখে। কেন এসেছেন জানতে চাইলে সোৎসাহে উত্তর দিলেন- ‘শেখের বেটিকে একনজর দেখার জন্য এসেছি। জীবনে এতো মানুষ কখনও দেখিনি। এবার নিজ চোখে দেখে গেলাম। এই এলাকার মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছু করেছেন। আমাদের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। মনের আশা পূরণ করতেই শেখের বেটিকে দেখতে এসেছিলাম। এখন হাসিমুখে বাড়ি ফিরবো।’

আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরের অঙ্গীকার ও দীপু মনির আশাবাদ

জনসভাকে ঘিরে গোটা নগরীতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। নগরীর মোড়ে মোড়ে বসে নিরাপত্তা চৌকি। পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মাছুম আহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়। নিরাপত্তার খাতিরে প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য রাখা হয়েছিল। জেলা পুলিশের পাশাপাশি বাইরের জেলা থেকেও পুলিশ সদস্য আনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ মঞ্চের প্রথম সারিতে নিরাপত্তায় ছিল এপিবিএন। নিরাপত্তার প্রশ্নে ছিল আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি।’

জনসভায় এতো মানুষ দেখে অভিভূত ফুলপুর থেকে আসা সমাজকর্মী জুলফিকার ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের জনসভা ইতিহাস করেছে। স্থানীয় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও সম্ভবত এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে অবাক হয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে সকাল থেকেই মিছিলের নগরীতে রূপ নেয় আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ময়মনসিংহ। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা নগরী। নেতাকর্মীদের গায়ে ছবি সম্বলিত নানা রঙের গেঞ্জিতে পুরো জনসভাস্থল হয়ে ওঠে রঙিন। এছাড়া সার্কিট হাউজ মাঠের আশপাশ, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি সড়ক ছেয়ে যায় ব্যানার, তোরণ আর বিলবোর্ডে। জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠে নির্মাণ করা হয় বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ। রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয় গোটা মাঠ।

সকাল থেকেই বাদ্য বাজিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলের দিকে আসতে থাকেন। আর ময়মনসিংহের বাইরের উপজেলা থেকে বাস-ট্রাক ও ট্রেনে করে নগরীতে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। এরপর পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে তারা জনসভাস্থলে যান। জনসভায় বিশাল শোডাউন করেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্ণধাররাও। শোডাউন করেছে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনূর রহমান বলেন, ‘ইতিহাস-ঐতিহ্যের ময়মনসিংহ থেকে নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা, হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ। ময়মনসিংহের মাটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি এটি শুধু কথায় নয় কাজেও প্রমাণিত হয়েছে।’

সূত্র জানায়, এই জনসভাকে ঘিরে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু ও সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ জনসভাকে স্বার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামে।

বিশেষ করে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবারের জনসভায় ১২ থেকে ১৫ লক্ষ লোকের বিশাল সমাগমের কথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বারবার উচ্চারণ করেছিলেন। সত্যিই তাঁর কথা হুবুহু মিলে গেছে। স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ জনসমুদ্র দেখলো শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহ। কারও কারও মতে, এটি জনসমুদ্র নয় রীতিমতো মহাসমুদ্র। এই মহাসমুদ্রের ‘প্রাণভোমরা’ একজন তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠের বিশাল জনারণ্যে মঞ্চ আলোকিত করে ওঠেন বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং নিজের ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সামনে কোন অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.ইকরামুল হক টিটু ও সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের চৌকস ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব আরও একবার সেই প্রমাণই সামনে এনেছে। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ‘টিম ওয়ার্ক’ জনসভা সফলে রেখেছে প্রভাবকের ভূমিকা।

পাশাপাশি গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কাজী খালিদ বাবু’র সার্বিক সহযোগিতা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনার দৌলতে ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ জানান দিয়েছে এগিয়ে আসা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার দুর্জেয় এই ঘাঁটিতে ঘটবে আরও একটি ভোট বিপ্লব। বিজয়ের হাসি হাসবেন দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার কাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই।

জনসভা সঞ্চালনাতেও ছিল চমক। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত।

বিশাল মহাসমুদ্রে মুগ্ধ বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজেও। জনসভায় আসা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের প্রতি যারপরেনাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করে জনসভায় এসেছেন। এই সভাকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, নি:স্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিলাম আমি তাই।’

শুধু তাই নয়, আগামীতে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নকাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তিনি প্রতিশ্রুতি দিলে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ময়মনসিংহ বিভাগসহ মুঠো মুঠো উন্নয়নে বদলে যাওয়া ময়মনসিংহ শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তারই প্রতিচ্ছবি।

কালের আলো/একে/এমএএএমকে