সমুদ্র সম্পদ লুট ঠেকাতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 7:37 pm | November 24, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
যৌথভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমুদ্র সম্পদ লুট ঠেকাতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, মহাসাগরে জাহাজে আক্রমণ হয়। পাইরেসি হয়। অনেকেই মাছ ধরে, এক্সেস ফিশিং করে। আমরা এসব ঠেকাতে চাই।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোর সহযোগিতা সংস্থা ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেন মোমেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইওআরএ’র মহাসচিব সালমান আল ফারিসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম।
সম্মেলনে ড. মোমেন বলেন, একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি এবং আন্তঃআইওআরএ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধা দূরীকরণের মাধ্যমে আইওআরএ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করা এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বর্তমানে আন্তঃআইওআরএ বাণিজ্য অনুপাত ৩৫ শতাংশ, যা ইউরোপের অনুরূপ মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ইউরোপে বাণিজ্যের এই হার ৬০ শতাংশ এবং উত্তর আমেরিকায় প্রায় ৪০ শতাংশ। মন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিধাহীন ভাবেই আমি বলতে পারি যে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দুই দশকেরও বেশি সময় পর আইওআরএ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাজারের যে সম্ভাবনা রয়েছে- তা সর্ম্পূণভাবে কাজে লাগানো হয়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইওআরএ টেকসই সংলাপ ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং এখন এটি এই অঞ্চলের উন্নয়ন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে প্রধান চালিকাশক্তি।
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও, আমরা আইওআরএ’কে এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফরমে পরিণত করতে এখনো আমাদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারিনি। বাংলাদেশ সবসময়ই এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণের জন্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
‘চেয়ার হিসেবে, আইওআরএ’র কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করতে সংগঠনটির সকল প্লাটফরমে কাজ করাকে আমাদের একান্ত কর্তব্য বলে মনে করি।’
ড. মোমেন বলেন, বিশ্ব এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দিকে আলোকপাত করছে। আর এজন্য, একটি আঞ্চলিক প্লাটফরম হিসেবে আইওআরএ, অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনের মতোই এর নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরতে- নিজস্ব প্রাধান্য বিস্তার, নিজস্ব যোগযোগ সৃষ্টি ও এর অভীন্ন কন্ঠ জোরদার করতে ভারত মহাসাগর অঞ্চলের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করছে।
‘আমাদের একটি অঞ্চলের মতো একযোগে চলতে হবে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলের একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে- আমাদের গোটা অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সাজাতে হবে।’
তিনি বলেন, একথা মনে রেখেই সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘আইওআরএ-উন্নয়ন উদ্যোগ (আইডিআই)’ গ্রহণ করেছে এবং এটা বর্তমানে আঞ্চলিক ঐক্য, অর্থনৈতিক ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, ঢাকা ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এই অঞ্চলের অভীন্ন স্বার্থ সংরক্ষণে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে আমাদের দিকনির্দেশনা দিবে।’
‘এই অঞ্চলে অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আইওআরএ এর সংলাপ অংশীদারদের কাছ থেকেও আমাদের সহায়তা প্রয়োজন। তিনি এই অঞ্চলে অদূর ভবিষ্যতে যে কোন বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে উন্নয়ন কাঠামোর ওপর জোর দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আরো দূরে চিন্তা করতে হবে। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তানের জন্য একটি নিবেদিত প্লাটফরম তৈরি করতে হবে।’ তিনি মহাসাগরকে দূষণমুক্ত রেখে এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য আইওআরএকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা ও অবদান রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় আইওআরএ’র মহাসচিব সালমান আল ফারিসি বলেন, সম্মেলনে আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে জোর দিয়েছি, কোনো বিষয়ে সামরিক নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম জানান, সম্মেলনে ৮টি বিষয়ে ফোকাস করা হয়েছে। এগুলো হলো- সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্র বাণিজ্য, দুর্যোগ প্রতিরোধ, মৎস্য ব্যবস্থাপনা, ট্যুরিজম, ব্লু -ইকোনমি ইত্যাদি। এছাড়া ক্লাইমেট চেঞ্জ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আইওআরএ’র পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে সৌদি আরবের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
আইওআরএ’র মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেন ১৬টি দেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন আইওআরএ সদস্য ২৩ ও পর্যবেক্ষক ১০ দেশ থেকে ১৩৪ জন প্রতিনিধি।
১৬ দেশের মধ্যে রয়েছে- ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মাদাগাস্কার, সাউথ আফ্রিকা, সোমালিয়া, ইয়েমেন, মালদ্বীপ, জাপান, মরিশাস, তাঞ্জানিয়া।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান চেয়ার বাংলাদেশ। ২৩ সদস্য দেশের এই সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরুর আগে ২২-২৩ সিনিয়র অফিসিয়ালস’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কালের আলো/এসবি/এমএম