বর্ণাঢ্য আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট’ শুরু; টুর্নামেন্ট হবে সফল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ

প্রকাশিতঃ 11:51 pm | March 19, 2022

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কালের আলো:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় ‘দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট’ শুরু হয়েছে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শনিবার (১৯ মার্চ) বিকাল ৫টায় পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে এ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক উন ইয়ং হ্যাক ও বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। আরও ছিলেন কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ডিআইজি হাবিবুর রহমান, র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদসহ কাবাডির ফেডারেশনের কর্মকর্তারা।

‘কাবাডি খেলার উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন খেলোয়াড় ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ছেলে শেখ কামালও কিন্তু সব সময় খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছে শেখ কামালের সঙ্গে মিলে আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার।

কাবাডি খেলার উন্নয়নের জন্য আগে তেমন কিছু করা না হলেও এখন অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।

সালমান ফজলুর রহমান বলেন, আগে শুধুমাত্র মোহামেডান ক্লাব ছিল। শেখ কামাল বলেছিলেন আমাদের খেলার মানটা বাড়াতে হলে মোহামেডানের পাশাপাশি আমাদের আরেকটা ক্লাব থাকতে হবে। সেটার জন্যই আমরা আবাহনী করেছি। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রিকেটে চলে এসেছে, ফুটবলে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজনকে সামনে রেখে গত বছর বঙ্গবন্ধুর নামে যে আন্তর্জাতিক কাপ টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করেছেন, সেজন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। এই টুর্নামেন্ট প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হবে বলে বিশ্বাস করি।

আগামী বছর এই টুর্নামেন্টে আরও দল বাড়বে আশা করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, করোনার মধ্যেও গতবার মাত্র পাঁচটা দেশ অংশ নিয়েছে। এবার কিন্তু আটটা দল এসেছে। যেসব দেশ প্রতি বছর কাবাডি খেলে, মার্চ মাসে আমাদের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সেই দেশগুলোর চোখ থাকবে। তারা খোঁজখবর রাখবে।

সালমান ফজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন চান আমাদের তরুণ-তরুণীরা যাতে খেলাধুলার সঙ্গে যেন সম্পৃক্ত থাকে। খেলাধুলার উন্নতির জন্য সরকারের তরফ থেকে অনেক কিছু করা হচ্ছে। প্রত্যেকটা উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই খেলা নিয়ে তেমন কিছু করা না হলেও এখন এটার উন্নতির জন্য অনেক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এবার ইরাক, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, নেপালসহ যারা টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে, টিম অফিসিয়ালসহ সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এখানে উপস্থিত আছেন ওনাকেও ধন্যবাদ জানাই। আশাকরি এটি একটি সফল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট হবে।’

‘বঙ্গবন্ধু কাবাডিকে জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা করেন’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাবাডি খেলাকে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে ঘোষণা করেন বলে মন্তব্য করেন র‌্যাবের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সেই থেকে আমরা জাতীয় খেলা হিসেবে কাবাডি আয়োজন করছি। প্রতি বছর আমরা স্বাধীনতা দিবসে ২৬ মার্চে প্রতিটি উপজেলায় একই দিনে একই সময়ে খেলে থাকি।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, গত বছরে আমরা প্রথম বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি এবং পাঁচটি দেশ গত বছর অংশগ্রহণ করে। যেখানে পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। করোনার প্রকোপের মধ্যেই আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম; অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। তবে এবার অংশ নিয়েছে ইংল্যান্ড, নেপাল, ইরাক, শ্রীলংকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও স্বাগতিক বাংলাদেশসহ আটটি দেশ।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাতীয় প্রোগ্রামেও আমাদের এই খেলাটি রয়েছে। এছাড়া প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, যুব টুর্নামেন্ট আইজিপি কাপ আমরা সম্পন্ন করেছি। ৫০ হাজার ছেলে, ৫০ হাজার মেয়ে সেই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। সেখান থেকে আমরা প্রতিভাবান খেলোয়াড় বাছাই করেছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সাবেক ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয়। তিনি বলেন, বিসিবির পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা দিচ্ছি, যদি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন আন্তর্জাতিক কোচ আনতে পারে সেই কোচের পুরো খরচ ক্রিকেট বোর্ড বহন করবে।

বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতি বছর কাবাডি টুর্নামেন্ট
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এখন থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশে কাবাডি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু কাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার আসর। স্বাগতিক দল বাংলাদেশ ছাড়া এবার সাতটি দল এতে অংশ নিচ্ছে। আফ্রিকা থেকে কেনিয়া, ইংল্যান্ড এসেছে ইউরোপ মহাদেশ থেকে। এছাড়া এশিয়া থেকে খেলছে শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মালয়েশিয়া।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করোনার কঠিন পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ সামনে রেখে গতবছর প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। গতবার ৫টি দল অংশ নিলেও এবার অংশ নিয়েছে ৮টি দল।’

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক উন ইয়ং হ্যাক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কঠিন একটা সময় পার করছি। এরপরও বিভিন্ন দেশের কাবাডির খোঁজখবর নিয়মিত রাখছি। ভবিষ্যতে কাবাডিকে অলিম্পিকে অন্তর্ভূক্তির জন্য চেষ্টা করব। এজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

উদ্বোধনের শুরুতেই নিজ নিজ দেশের পতাকা হাতে মার্চ পাস্ট করে প্রথম ম্যাটে প্রবেশ করে ইরাক কাবাডি দল। এরপর একে একে ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, কেনিয়া সবশেষ দল হিসেবে প্রবেশ করে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

কালের আলো/বিএসবি/এমএন