জয় হোক ভোটারের

প্রকাশিতঃ 11:30 am | January 09, 2022

তুষার আবদুল্লাহ :

এবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তিনটি ভোট দেখা হবে। ভোট দেখা হয়েছে অন্যান্য নগরেরও। তবে নারায়ণগঞ্জের মতো এতো জমজমাট নির্বাচন দেখা হয়নি। শ্রমিকের শহর। উৎপাদনের শহর। শীতলক্ষ্যা পাড়ের এই ভোটের আলোচনার কেন্দ্রে যারা থাকেন, তারা ঐ শহরের ভূমিপুত্র-ভূমিকন্যা।

ভোটে অংশ নেন বা না নেন তারা আলোচনায় থাকেন। তাদের কেন্দ্র করেই নির্বাচনের মেরুকরণ হয়। স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় পক্ষ বিপক্ষ। প্রচারণার মাঠে, বক্তব্যে উত্তাপ ছড়ালেও ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ, নির্বাচন পরবর্তী কোন সহিংসতার ঘটনাও ঘটেনি। পুরো ভোটই ছিল উৎসব মুখর। প্রতিবারই স্থানীয় নাগরিকেরা তাদের ইশতেহার দিয়েছেন, সেই ইশতেহার নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলাররা কতোটা গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের ইশতেহারে যুক্তকরে প্রয়োগ করেছেন, সেটা বলতে পারবেন নারায়ণগঞ্জ নগরের বাসিন্দারা।

সকল নির্বাচনেই স্থানীয় সরকার নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত যারা, তারা বলে আসছেন নগর সেবা মেয়র কেন্দ্রিক রাখা স্বাস্থ্যকর নয়। নাগরিকদের অভিযোগ, আবদার আসতে হবে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। সেবাটিও কাউন্সিলারদের মাধ্যমে নাগরিকদের দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে।

বাহ্যিক ভাবে দেখা যায়- শহরে যানজট বেড়েছে। রাস্তাঘাটে খানাখন্দ আছে। ফুটপাথ হকারের দখলে। জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নর্দমা পরিষ্কার রাখা, আবর্জনা অপসারণ নিয়ে নাগরিকদের অভিযোগ দেখতে পাই গণমাধ্যমে। নিজেও কয়েকবার গিয়ে শহরটিকে অপরিচ্ছন্নই দেখছি। সঙ্গে আছে শীতলক্ষ্যা দূষণ। এই দিক গুলো নিয়ে এর আগের দুই নির্বাচনের আগে নাগরিকদের কাছ থেকে দাবি এসেছিল সমাধানের। কতোটা পূরণ হলো সেই আমলনামা এখন ভোটারদের হাতে।

সকল নির্বাচনেই স্থানীয় সরকার নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত যারা, তারা বলে আসছেন নগর সেবা মেয়র কেন্দ্রিক রাখা স্বাস্থ্যকর নয়। নাগরিকদের অভিযোগ, আবদার আসতে হবে স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে। সেবাটিও কাউন্সিলারদের মাধ্যমে নাগরিকদের দুয়ারে পৌঁছে দিতে হবে।

শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় সকল নগরেই এই চর্চা অনুপস্থিত। আমরা দেখতে পাই সকল নির্বাচনেই গণমাধ্যমসহ সকলের নজর থাকে মেয়রদের ওপর। আলোর বাইরে থাকেন কাউন্সিলাররা। ফলে নগর পরিচালনার বেলাতেও তারা উপেক্ষিত হয়ে পড়ছেন ক্রমশ। শুধু জন্ম নিবন্ধন ও চারিত্রিক সনদ দেয়াতে তাদের কাজ সীমিত রাখা ঠিক না। কাউন্সিলারদের সক্রিয় রাখা গেলে মাদক- সন্ত্রাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কারণ তাদের মধ্যে তখন জবাবদিহিতা তৈরি হবে।

ফিরি নারায়ণগঞ্জে। বার তিনেক যাওয়া হলো এবার। ভোট জমে উঠেছে। শহরে পৌষের চেয়েও ভোটের হাওয়া বয়ে যাচ্ছে তীব্র ভাবে। বিএনপি ভোটে না অংশ নিলেও, সদ্য বিদায়ী মেয়রের সঙ্গে যিনি লড়ছেন তাঁকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র প্রতিকৃতি বলেই জানেন। ভোটের অঙ্ক মেলাবেন ভোটাররা। প্রার্থীরা যে যেই অবস্থান থেকেই ভোটে অংশ নেন না কেন, পূর্বের ঐতিহ্য দেখে নিশ্চিত করেই বলা যায়- প্রার্থীদের জয়ের আগে, জয় হবে ভোটারের। তারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোটকে উৎসবের উপলক্ষ্য করে তুলবেন। ভোটের সপ্তাহ খানেক আগে এমন পূর্বাভাস দেওয়ার মতো আবহাওয়াই এখন বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত বেশ উপভোগ্যই মনে হচ্ছে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।