ডিএনসিসির কর্মী না হয়েও ৩ বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ঘাতক হানিফ

প্রকাশিতঃ 1:52 pm | November 27, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লাবাহী গাড়ি চাপায় গণমাধ্যম কর্মী মো. আহসান কবির খান (৪৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই গাড়ির চালক মো. হানিফকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খোন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের একটি দল গতকাল (শুক্রবার) রাতে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাকের চালক মো. হানিফ ওরফে ফটিককে (২৩) গ্রেফতার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ ওই সংবাদকর্মীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন।

কমান্ডার খব্দকার আল মঈন জানান, সাম্প্রতিক সময়ে গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর রাজধানীতে ময়লাবাহী গাড়ি চাপায় দুজন নিহত হয়েছেন। গত ২৪ নভেম্বর গুলিস্তান এলাকায় নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম খান ময়লাবাহী গাড়ি চাপায় নিহত হন। এইচএসসি পরীক্ষার্থী এই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাকের মূল চালক হারুনকে গত ২৬ নভেম্বর আটক করে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল।

অপরদিকে পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে ময়লাবাহী আরেকটি গাড়ির চাপায় নিহত হন সংবাদমাধ্যম কর্মী মো.আহসান কবির খাঁন (৪৬)। তিনি দৈনিক সংবাদে কর্মরত ছিলেন। ইতিপূর্বে তিনি প্রথম আলোসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আহসান কবির খাঁন গত ২৫ নভেম্বর তার মগবাজারস্থ বাসা থেকে মিরপুরের কর্মস্থলে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ এর একটি মোটরসাইকেল করে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটে সোনারগাঁ মোড় থেকে পান্থপথে যাওয়ার রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষা করছিলেন মোটরসাইকেলের পিছনের আসনের আরোহী আহসান কবির খাঁন।

এ সময় অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাক সেখানে অপেক্ষা করছিল। সিগন্যাল ছাড়া মাত্রই আহসান কবির খাঁনের মোটরসাইকেল ধাক্কা খেলে তিনি মাটিতে ছিটকে পড়েন। ময়লাবাহী গাড়ির চালক গাড়িটি না থামিয়ে তার উপর দিয়ে চালিয়ে চলে যায়। এ সময় অন্যান্য মোটরসাইকেল চালক এবং স্থানীয় লোকজন গাড়িটিকে ধাওয়া দিলে ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাকটি গ্রীনরোড সিগন্যাল পর্যন্ত গিয়ে চালক এবং তার সহকারী গাড়িটি রেখে পালিয়ে যায়।

পরে উপস্থিত পথচারীরা আহসান কবিরকে ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার নিকট প্রাপ্ত পরিচয়পত্র থেকে তাকে শনাক্ত করা হয়। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাদিরা পারভীন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে গত ২৬ নভেম্বর চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সময় ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাক এর চালক মো. হানিফ ওরফে ফটিককে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, গ্রেপ্তারকৃত হানিফ নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত হানিফকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, গত ২৫ নভেম্বর কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলীতে ময়লা পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ছিল এবং সকালে দুবার ময়লা নিয়ে গিয়েছিল। ময়লা নিয়ে তৃতীয়বার যাওয়ার সময় ময়লাবাহী ট্রাক দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন তাকে ধাওয়া করলে সে কৌশলে গাড়ি থেকে নেমে লোকাল বাসে করে গাবতলীতে চলে যায়। গাবতলী থেকে ওই দিনই সদরঘাট হয়ে লঞ্চে করে চাঁদপুরের হাইমচরে আত্মগোপন করে।

গ্রেপ্তারকৃত হানিফ আরও জানায়, সে প্রথমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর গাড়ি মেরামত ওয়ার্কশপে মূল মেকানিকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। গাড়ি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতার সুবাদে প্রায় ৬/৭ বছর যাবৎ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়ে আসছে। গত ৩ বছর যাবৎ সে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ধরনের হালকা ও ভারী যানবাহন চালাতো। সর্বশেষ গত এক বছর যাবৎ সে ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাক চালাচ্ছে।

সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত কর্মচারী/ চালক না হলেও তাকে ময়লাবাহী ভারী ডাম্প ট্রাকটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এজন্য তাকে কোনো নির্দিষ্ট বেতন দেওয়া না হলেও গাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত তেল হতে অতিরিক্ত তেল বিক্রিই তার আয়ের উৎস বলে সে জানায়।

ময়লাবাহী ডাম্প ট্রাক একটি ভারী যানবাহন, যা চালানোর জন্য পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হলেও তার নামে শুধু হালকা যানবাহন চালানোর একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে বলেও জানায় র‍্যাব।

কালের আলো/এসবি/এমএইচএ