যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে ডেকেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 6:18 pm | November 25, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে হতে যাওয়া ‘শীর্ষ গণতন্ত্র সম্মেলনে’ দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে ডাকা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, যেসব দেশ গণতন্ত্রের দিক থেকে দুর্বল, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাদের ডাক দিয়েছে। তারা দুই পর্বে করবে বলেছে। প্রথমে কয়েকটি দেশ যারা গণতান্ত্রিক দিক থেকে খুবই দুর্বল তাদের নিয়ে। আমাদের বাদ দিয়েছে সেটা আমি বলি না। হয়তো পরে তারা আমাদের বলবে। এটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নাই, এটা তাদের দায়দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ডেমোক্রেসি সামিট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্র নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে। আড়াইশ বছরের পুরোনো গণতন্ত্র, কয়েকদিন আগে দেখলেন তো কী অবস্থা? তারা যে গণতন্ত্র সম্মেলন করছে, এটা নিয়ে খোদ তাদের দেশেই প্রশ্ন আসছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র স্বচ্ছ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের গণতন্ত্র স্টেবল (স্থিতিশীল)। আমাদের দেশে অত্যন্ত স্বচ্ছ একটি গণতন্ত্র আছে। এখানে ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ভোটের মাধ্যমে। মানুষ ভোট দিচ্ছে। যে নির্বাচনে দাঁড়াতে চায় সে সুযোগ পাচ্ছে।
ড. মোমেন আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে নির্বাচন হলো, অনেক লোককে ভোট দিতে দিল না। আফগানিস্তানেও একই ঘটনা হলো। আমাদের দেশের সব লোক ভোট দিতে পারে। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। সেদিক থেকে আমরা অনেক অগ্রসর।
বাংলাদেশের নাম না থাকা নিয়ে সাংবাদিকরা কেন দুশ্চিন্তায়- এমন প্রশ্ন রাখেন মোমেন। তিনি বলেন, আপনাদের এত দুশ্চিন্তা কেন? একজন আমাকে উপদেশ দেবে, সে অনুযায়ী আমার গণতন্ত্র হবে, নো। আমার গণতন্ত্র আমাদের লোকদের ওপর। অন্যের পরামর্শে আমরা কাজ করি না। আমরা মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করি। সেটা যেন আরও উন্নত হয় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি, আরও করে যাব। অনুষ্ঠানে গিয়ে বকবক করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ফলে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা এলডিসি হিসেবে অনেকগুলো বেনিফিট পেতাম। আগামীতে সেগুলো আমরা হারাব। আমরা যেন সেসব বেনিফিট না হারাই, তার জন্য আমরা কাজ করছি।’

এর আগে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় দেশগুলো দোষ করে আর ক্ষতি পোহাতে হয় আমাদের। তাদের কারণে আমাদের কষ্ট হয়। এটি জাস্টিস নয়। জলবায়ু বিপর্যের কারণে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ১৬ লক্ষ লোক মারা গেছে।
‘জলবায়ু ইস্যুতে প্রতি বছর আমরা পাঁচ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করছি। এই টাকাটা আমরা মানুষের চাকরি সৃষ্টিসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য খরচ করতে পারতাম।’
জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর জিডিপির ২ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে চলছে সেভাবে চললে আগামীতে আমাদের জিডিপির ৯ ভাগ লস হবে।
‘এক দেশের পক্ষে জলবায়ু সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। এটির জন্য পার্টনারশিপ এবং কোলাবোরেশন প্রয়োজন। প্রতিটি দেশকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরীও সেখানে বক্তব্য দেন।
কালের আলো/এমএম/এসবি