সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আবেগরুদ্ধ কন্ঠে উচ্চারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার

প্রকাশিতঃ 9:18 pm | November 21, 2021

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো :

স্বজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, নির্মম সেটি বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না, জানেনও না। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের ভয়ঙ্কর কালো রাতে বাবা-মা’সহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নিজের বক্তব্যের শুরুতেই ইতিহাসের কলঙ্কজনক সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসজল হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: শান্তিকালীন অবদানের জন্য ওএসপি পদক পেলেন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন

দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আত্নিক এবং সুদৃঢ় পারিবারিক বন্ধন। প্রধানমন্ত্রীর সহোদর দু’ছোট ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ‘চোখের মণি’ ছোট্ট শেখ রাসেলেরও স্বপ্ন ছিলো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই বাহিনীটির একজন সদস্য হিসেবে নিজেকে বিকশিত করা। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেটে কুঁড়িতেই ঝরে যায় এই ফুল।

বাস্তবিক ও যন্ত্রণাদায়ক এই গল্পই যখন হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করছিলেন তখন মুহুর্তেই ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে তাঁর হৃদয়। নিমিষেই বেদনায় ভারী হয়ে উঠে গণভবন ও সেনাকুঞ্জের পরিবেশ। অশ্রুতে ছলছল করে ওঠে সেনাকুঞ্জে দাঁড়ানো জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামানসহ উপস্থিত সবার চোখই। কিন্তু সতের কোটির বাংলাদেশই একজন শেখ হাসিনার প্রাণশক্তি, অফুরান প্রেরণার উৎস!

এদেশের মানুষের প্রতিই তাঁর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস। ফলে মানসিকভাবে আবারও নিজের অমিত দৃঢ়তার কথাই জানান দেন টানা তিনবারের এই সরকারপ্রধান। রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১’ এর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে খানিক সময়ের জন্য এমন বেদনাবিধূর দৃশ্যের অবতারণা হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সরকারপ্রধান। আন্ত:বাহিনী বাদক দলের ব্র্যান্ডে বাজানো জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ও সমাপ্তি ঘটে। এরপর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব ও গৌরবগাঁথা উপস্থাপন করা হয়।

জল, স্থল ও আকাশে অবিরাম ঘোষণা বাংলার জয়
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আজ আশা প্রকাশ করে বললেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্রই প্রশংসিত হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখবে।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেওয়া সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একযোগে ত্রিমুখী আক্রমণ উন্মুক্ত করে বিজয়ের পথ। পিছু হটতে থাকা পাকিস্তান বাহিনী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাধ্য হয় আত্নসমর্পণে।

মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আধুনিকতার পথযাত্রায় লাভ করেছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান ও নৌ বাহিনীর প্রধানও সব সময় কৃতজ্ঞচিত্তেই সেই কথা উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম আজ দেশের গন্ডি ছাপিয়ে বৈশ্বিক পরিমন্ডলেও।

অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজসহ প্রতিরক্ষার সকল উপকরণ যেমন যোগ হয়েছে বাহিনীতে তেমনি পেশাদারিত্ব বাড়াতে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, পিস কিপিং ইন্সটিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। কঠোর পেশাদারিত্ব, নিয়মানুবর্তিতা আর দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জল, স্থল বা আকাশে অবিরাম ঘোষণা করে চলেছে বাংলার জয়।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে ‘পিপলস আর্মি’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হবে জনগণের বাহিনী তথা পিপলস আর্মি’। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতির অহংকার। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবো, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। ডিসেম্বরের শুরুতে সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে মিত্র বাহিনীর ঐক্যবদ্ধ আক্রমণে পর্যুদস্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাঁথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।’

জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল আধুনিক ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী
‘জাতির পিতা একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি গড়ে তোলা হয় এবং কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন।’

তিনি বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গড়ার প্রত্যয়ে জাতির পিতা একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে যুদ্ধ জাহাজও সংগ্রহ করেন।

জাতির পিতা ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ১৯৭৩ সালে সেসময়ের অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হয় এবং এরই মাধ্যমে এদেশে একটি আধুনিক বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।’

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সামরিক একাডেমিতে প্রথম ব্যাচের ক্যাডেটদের সমাপনী কুচকাওয়াজে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দিক নির্দেশনাও দেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁর উদ্দেশ্য উল্লেখ করে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সামরিক বাহিনী, বেসামরিক বাহিনী, জনগণ সকলের কাছে আবেদন জানাবো- সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে অভাব, অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন, দেশ গড়বার কাজে আত্মনিয়োগ করুন।’

‘কিন্তু, দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সকল অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়’-যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। সেসময়ে তাঁর সরকার ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)’ এবং আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি, তাঁর সরকারই সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর থেকে জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালা অনুসরণে তাঁর সরকার অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা, যুগোপযোগী ‘প্রতিরক্ষা নীতি, ২০১৮’ প্রণয়নসহ গত ১৩ বছরে তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে।’

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- জাতির পিতা প্রদত্ত এই নির্দেশনাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হিসেবে মেনে চলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক সমরাস্ত্র সমৃদ্ধ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামাদি, আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও মেরিটাইম হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে ‘সোয়াড্স’ গঠন করেছি। পটুয়াখালীতে বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি, কক্সবাজারে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র সংযোজন করেছি। লালমনিরহাটে এভিয়েশন ও এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ নির্মাণ করেছি।

‘এয়ার ডিফেন্স নোটিফিকেশন সেন্টার’ নির্মাণ করেছি। সশস্ত্র বাহিনীতে চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে আমরা সিএমএইচসমূহে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন ডিপার্টমেন্ট ও ওয়ার্ড সংযোজন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সিএমএইচ-এ জোড়া মাথার শিশু রাবেয়া-রোকেয়াকে পৃথকীকরণের মত জটিল অস্ত্রোপাচার ও সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে।

দেশের ক্রান্তিলগ্নে আত্নত্যাগে প্রস্তুত সশস্ত্র বাহিনী
শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত। এই বাহিনীর সদস্যরা বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও হাসপাতাল স্থাপন, আটকে পড়া দেশি-বিদেশি লোকজনকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা, গুরুতর রোগী এবং চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

করোনার পাশাপাশি মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।

অপরদিকে আমাদের নৌবাহিনী ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগারিকদের জন্য আবাসন এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। সম্প্রতি বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী দেশের উপকূলীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় সীডবল নিক্ষেপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিতকরণ এর দায়িত্ব দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকাকেও প্রশংসিত করেছে। বর্তমানে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আবারো সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান অন্যান্যের মধ্যে সেনাকূঞ্জে উপস্থিত ছিলেন।

আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী সেনাকুঞ্জে এসে পৌঁছালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) সস্ত্রীক তাঁকে স্বাগত জানান।

কালের আলো/এমএএএমকে

Print Friendly, PDF & Email