পরকীয়া লুকাতে নিজের মেয়েকে হত্যা করে আমির

প্রকাশিতঃ 4:01 pm | November 17, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রতিবেশী লাইলি আক্তারের (৩০) সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কুমিল্লার দেবিদ্বারের ট্রাক্টরচালক আমির হোসেন (২৫)। বয়সে পাঁচ বছরের বড় লাইলির সঙ্গে আমিরের সম্পর্ক বছরখানেক। হঠাৎ একদিন আমিরকে লাইলির সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থিত দেখে ফেলেন পাঁচ বছরের শিশু ফাহিমা।

আর এ দেখাটাই কাল হয় শিশুটির জন্য। ঘটনা চাপা দিতে লাইলির প্ররোচনায় নিজের মেয়ে ফাহিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বাবা আমির হোসেন।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাবা আমির হোসেন, চাচাতো চাচা রবিউল আউয়াল ও রেজাউল ইসলাম ইমন, পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত মোসা. লাইলি আক্তার এবং সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর স্ত্রীকেও খুন কিংবা ডিভোর্স দিয়ে লাইলিকে নিয়ে সংসার শুরু করতে চেয়েছিলেন আমির হোসেন। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মেয়েকে হত্যা করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ৭ নভেম্বর বিকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। শিশু ফাহিমার পিতা আমির হোসেন দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের পর ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন ৭ ও ৮ নভেম্বর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন এমনকি গত ৮ নভেম্বর ঝাড়ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন ফকির-কবিরাজকেও খবর দেন।

পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর পুলিশ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালের ডোবা থেকে নিহতের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ফাহিমার পরিচয় নিশ্চিত করে তার পরিবার। ওই ঘটনায় ঘাতক বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত বাবাসহ ৫ আসামিকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হয়।

র‌্যাব জানায়, পরিকল্পনা মোতাবেক ৬ নভেম্বর রাতে রেজাউল ইসলাম ইমনের ফার্নিচার দোকানে পিতা আমির হোসেন টাকার বিনিময়ে রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাহিমাকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে।

ধারালো ছুরি ও হত্যার পর লাশটি লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করেন তারা। পরবর্তীতে গত ৭ নভেম্বর বিকালে চকলেট কিনে দেয়া ও বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানার সিএনজিতে করে দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর নির্জন স্থানে শিশু ফাহিমাকে নিয়ে যান।

হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাত-বাবার হাতে শ্বাসরোধে হত্যা
লাইলি আক্তারের উপস্থিতিতে আমির হোসেন তার মেয়ে ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সর্বপ্রথম নিজেই মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে দেন। পরে বাবা আমির হোসেন নিজেই ফাহিমার গলায় চেপে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর শিশু ফাহিমার মরদেহ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে ইমনের গরুর ঘরে ড্রামে লুকিয়ে রাখেন। ৯ নভেম্বর রাতে সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির হোসেন, রবিউল, ইমন বস্তাবন্দি ফাহিমার মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর কালভার্টের নিচে ডোবায় ফেলে দেন।

নিখোঁজ কন্যা ফাহিমাকে খুঁজে পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোম্পানীগঞ্জেও স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ খুঁজতে যায়। ১৪ নভেম্বর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর ঘাতক বাবা আমির হোসেন নিজেই বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

‘প্রকৃত হত্যাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পোস্ট করে, যাতে তাদের ওপর কারো সন্দেহ না হয়’-উল্লেখ করেন র‌্যাব মুখপাত্র।

কিভাবে বাবাসহ হত্যাকারীদের শনাক্ত হলো জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘শিশু ফাহিমাকে হত্যার পর গরুর খাবারের বস্তা দেখেন র‌্যাব সদস্যরা। এরপর ইমনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় বাবা আমির হোসেনসহ বাকি আসামিদের।’

কালের আলো/এসবি/এমএম