অনলাইনে বোমা তৈরি শিখে পুলিশের ওপর হামলা করে জেএমবির সদস্যরা
প্রকাশিতঃ 3:58 pm | August 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
২০১৬ সালে হলি আর্টিসান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো। তবে এর ঠিক তিন বছর পর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন পুলিশ বক্সে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করে হামলা ও হামলাচেষ্টার মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসে জঙ্গিরা।
বলা হচ্ছে এসব হামলার সঙ্গে জড়িত নব্য জেএমবির সদস্যরা। হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
কিন্তু তারপরেও নব্য জেএমবির সদস্যদের বোমা তৈরি বন্ধ করা যায়নি। সর্বশেষ গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে শক্তিশালী একটি বোমা উদ্ধার হয়।
এ ঘটনায় জেএমবির বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর জাহিদ হাসান ওরফে বোমা জাহিদ ওরফে রাজু ওরফে ফোরকান ভাই। সম্প্রতি জাহিদের দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
গ্রেফতাররা হলো- শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান।
সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ১৬ মে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির এই দুই সদস্যকে গতকাল রোববার (১ আগস্ট) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম লাল রঙের বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ, তিনটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, এক সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, চার প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ১০টি ক্রিসমাস বাল্ব, দুটি কালো রঙের ইলেকট্রিক টেপ, একটি আইইডি তৈরির ম্যানুয়াল, হামলায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।’
সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অফলাইনে তাদের (জঙ্গিদের) তৎপরতা নেই, তবে তারা অনলাইনে সক্রিয়। যদিও এজন্য নগরবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো ঘটনা ঘটার আগেই জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করছে সিটিটিসি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১১ জুলাই সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াত টিম যৌথ অভিযানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করে। মামুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর শফিকুর ও খালিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশে গত ১৬ মে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। ত্রুটিপূর্ণ রিমোটের কারণে কয়েকবার চেষ্টা করেও বোমাটি বিস্ফোরণে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং রিমোটটি রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে।’
তিনি বলেন, ‘মাহাদী হাসান জনের নেতৃত্বে গ্রেফতার শফিকুর রহমান নব্য জেএমবির সামরিক শাখার ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। গ্রেফতার শফিকুর ও খালিদ হাসান বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও ভিডিও দেখে বোমা তৈরির অনলাইন প্রশিক্ষক ফোরকানের তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে হামলায় ব্যবহৃত আইইডিটি তৈরি করে।’
‘গ্রেফতাররা তাদের অন্য সহযোগীদের নিয়ে নাশকতা ও পুলিশকে হামলার লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।’
বোমা জাহিদ ওরফে জাহিদ ওরফে ফোরকান সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ফোরকান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বোমা তৈরির দক্ষতা রয়েছে। অনলাইনে প্রশিক্ষক হিসেবে ফোরকান গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে আইইডিটি তৈরি করেছিল, যা পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে। ফোরকানকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
জঙ্গিদের অনলাইন তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে তৎপরতা বেড়েছে। আমরাও তৎপর। অনলাইনভিত্তিক তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেই নগরবাসীর উদ্বিগ্ন বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আমরা সম্প্রতি অনেক শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেফতার করেছি। আমরা নগরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জঙ্গিরা এখন হুমকি নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদুজ্জামান।
কালের আলো/এসআরকে/এমএম