বহুরূপী প্রতারক ঈশিতা, কিনেছেন ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদও

প্রকাশিতঃ 7:57 pm | August 01, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

কখনও সেনাবাহিনীর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, কখনও কর্নেল, কখনও আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা বিজ্ঞানী; এমন অসংখ্য ভুয়া পরিচয়ে পরিচিত ইশরাত রফিক ঈশিতা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে, অংশ নিয়েছেন টকশোতেও। আলোচিত এই নারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শুধু এসবই নয়, গ্রেফতার ঈশিতা প্রতারণার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর র‌্যাংক ব্যাচ ও পদ অর্জনের চেষ্টা চালান। ফিলিপাইনে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (IPC.Phil.com) থেকে ৪০০ ডলারের বিনিময়ে সামরিক বাহিনীর মতো ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পদটি গ্রহণ করেন। যার সত্যতা ও যথার্থতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন ও কাউন্টার ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন সংগঠনের পদে সনদপ্রাপ্ত বলে ভুয়া প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।

রোববার (১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে (সেশন ২০০৫-০৬) এমবিবিএস সম্পন্ন করে ২০১৪ সালে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যোগদান করেন ঈশিতা। চার মাস চাকরি না করতেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন উচ্চাভিলাষী তরুণ চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষক ওরফে বিশিষ্ট আলোচক ওরফে ডিপ্লোম্যাট ওরফে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওরফে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতা। এরপরই শুরু তার বহুমুখী প্রতারণা।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৪ এর অভিযানে রোববার (১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন মিরপুর-১ থেকে ঈশিতাকে (৩৪) সহযোগী শহিদুল ইসলাম ওরফে দিদারসহ (২৯) গ্রেফতার করা হয়। ঈশিতার বাবার নাম খন্দকার রফিকুল ইসলাম। ঢাকার কাফরুলে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

অভিযানে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, ৩০০ পিস ইয়াবা, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে ও গোয়েন্দা অনুসন্ধানের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার ইশরাত রফিক ঈশিতা পেশায় একজন চিকিৎসক। যিনি বিভিন্ন মাধ্যমে একজন আলোচক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি সম্পন্ন, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন বলে ভুয়া পরিচয় প্রদান করে আসছিলেন। ভুয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তিনি ভুয়া নথিপত্র তৈরি ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ময়মনসিংহে অবস্থিত একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। চার মাস পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন।

গ্রেফতার শহীদুল ইসলাম দিদার সম্পর্কে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১২ সালে একটি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা (ইঞ্জিনিয়ার) সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমাও সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একটি গার্মেন্টসে কমার্শিয়াল ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। তিনিও ফিলিপাইনে একই সাইট হতে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া মেজর জেনারেল পদ বাগিয়ে নেন। নিজেকে আইন সহায়তা কেন্দ্রের (আসক) ইয়াং ওয়ার্ল্ড লিডার কর হিউম্যানিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের ফাউন্ডার (প্রতিষ্ঠাতা) বা কর্ণধার হিসেবে উপস্থাপন করেন। একইভাবে তিনি দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থার দূত বা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পরিচয় দিতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার প্রতারক ঈশিতা ও দিদার যোগসাজশে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ভুয়া সদস্য, কর্ণধার বা দূত হিসেবে দেশে-বিদেশে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। তাদের আরও বেশ কয়েকজন সহযোগী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কালের আলো/এসবি/এমআরকে