মানুষ হিসেবে আমাদের অহংকারের শেষ নেই : জয়া
প্রকাশিতঃ 10:47 am | June 30, 2021

শোবিজ ডেস্ক, কালের আলো:
সারা দেশে করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ। এই সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন। বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের সকল বিনোদন কেন্দ্র। খরচ নির্বাহ করতে না পারায় সেখানকার ঘোড়াগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছে মালিকরা। এতে করে করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত একাধিক ঘোড়া অনাহারে মারা গেছে।
কক্সবাজারে মৃত তেমনই একটি ঘোড়ার ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবিতে দেখা যায়, ঘোড়াটি মরে সৈকতে পড়ে আছে। এই ঘটনায় মন ভারী দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের। মনের ব্যথা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে তিনি দিয়েছেন লম্বা একটি স্ট্যাটাস। তারই একটি লাইনে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘মানুষ হিসেবে আমাদের অহংকারের শেষ নেই।’
জয়া স্ট্যাটাসে যা লিখেছেন-
কক্সবাজারে মৃত ঘোড়ার ছবিটি আমার মন অবশ করে দিয়েছে। ঘোড়ার এমন করুণ ছবি নেওয়া যায় না। এদের প্রখর অভিজাত সৌন্দর্যই ছোটবেলা থেকে আমাদের সবার মন ভরিয়ে রেখেছে। ঘোড়ার এমন অসহায় মৃত্যু মন অন্ধকার করে দেয়। কারোরই এমন মৃত্যু প্রত্যাশা করা যায় না।
মানুষ হিসেবে আমরা একা একাই সভ্যতার পথ ধরে এগিয়ে আসিনি। প্রকৃতি আর প্রাণিজগতের অসামান্য সাহায্য না পেলে এ পথে আমরা এক পা-ও এগোতে পারতাম না।
ঘোড়াকে মানুষ নিজের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে ৫ হাজার বছর ধরে। ঘোড়া তার প্রবল শক্তি, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানচিত্র মনে রাখার প্রতিভা আর অসামান্য বন্ধুত্বের ক্ষমতা দিয়ে যুগ যুগ ধরে মানুষকে মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। ঘোড়ার সহযোগিতায় মানুষ জীবনের চাকা ঘুরিয়েছে, পৃথিবীর এক প্রান্ত আরেক প্রান্তে পৌঁছানোর সাহস করতে পেরেছে, হৃদয়ে সৌন্দর্যের নতুন তাৎপর্য খুঁজে পেয়েছে।
এত দূর চলে এসে আজ আমরা সেসব ভুলতে বসেছি। মানুষ হিসেবে আমাদের অহংকারের শেষ নেই। সে মুর্খ অহংকারে পেছনের সবকিছু আমরা তাচ্ছিল্য করছি। প্রকৃতির তাণ্ডব সে জন্য এখন আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে।
এই ঘোড়াগুলো এতদিন আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে জীবিকা দিয়ে আসছিল। করোনায় পর্যটকশূন্য কক্সবাজারে ওরা হয়ে পড়েছে চরম দুর্ভাগা। পোষাতে না পেরে মালিকেরা ওদের ছেড়ে দিয়েছে। খাদ্যহীন হয়ে ওরা রাস্তায় পড়ে মরছে।
যতদূর জানি, এসব প্রাণীকে খাদ্যহীন করে অসুস্থ করে লোকালয়ে ছেড়ে দেওয়ার অধিকার আইন কাউকে দেয় না। কিন্তু আইন বা শাস্তির বাইরেও কি মানবিকতা বলে কিছু নেই। ওরা কি আমাদের আরেকটু মনোযোগ, আরেকটু যত্ন পেতে পারে না? সমুদ্রসৈকতে পর্যটনের এই বাহকদের দেখার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ নেই? কোনো অধিদপ্তর?
একদল ছেলেমেয়ে এদের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। ওদেরকে আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা। কারো দিকে না তাকিয়ে হৃদয়বান অন্য মানুষদেরও যুক্ত হতে অনুরোধ করি।
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম