অমি’র ফাঁদেই বোট ক্লাবে যান পরীমনি
প্রকাশিতঃ 6:16 pm | June 15, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলোঃ
ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দায়েল হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হন ঢাকার ক্লাবপাড়ার পরিচিত মুখ আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি। পুলিশ জানিয়েছে অমির পাতা ফাঁদেই ওইদিন ঢাকা বোট ক্লাবে যান চিত্রনায়িকা পরীমনি।
পুলিশ বলছে, এ ঘটনার নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেন অল্প সময়ে অঢেল বিত্তের মালিক হওয়া অমি। পরীমনির ঘটনা সামনে আসার পরপরই তিন নারীসহ অমির উত্তরার বাসায় গা-ঢাকা দেন নাসির। এ থেকে স্পষ্ট, অমির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
গত ৮ জুন মধ্যরাতে কৌশলে পরীমনিকে আশুলিয়ার বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান অমি। অভিনেত্রীকে ফাঁদে ফেলতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটা করেন তিনি। এরপর সেই রাতে পরীমনি ভয়ংকর নিপীড়নের শিকার হন।
এ সময় অভিনেত্রীকে বাঁচাতে কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো নিপীড়কদের সহায়ক হন তিনি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো পথ না পেয়ে চার দিন পর রোববার অভিনেত্রী নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি সবার সামনে আসে। পরে পরীমনির মামলা দায়ের হলে অভিযানে নামে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযুক্ত মূল দুই আসামিসহ পাঁচজনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট, এ ঘটনার মূল হোতা অমি। সব অভিযুক্তকে আরও বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
‘পরীমনি সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর তিন নারীকে নিয়ে অমির বাসায় পালান নাসির। মাদক রাখার অভিযোগে ওই তিন নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে। নানা অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জেনেছি,’ বলেন তিনি।
বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল ওইদিন:
ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় সোমবার (১৪ জুন) অভিযোগ দায়ের করেন পরীমনি। মামলায় উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে লেখা হয়েছে, ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি, বনিসহ দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন।
পথে অমি বলে, বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো তারা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি থামান। তবে বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়।
‘তখন অমি অনুরোধ করেন, সেখানকার পরিবেশ সুন্দর; চাইলে নামা যাবে। এরপর পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ঢাকা বোট ক্লাবে ঢুকে সেখানকার টয়লেট ব্যবহার করেন। টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরপরই নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন।
বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে নাসির ও অমি তাদের মদপান করার জন্য জোর করেন। মদপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে পরীমনির মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে পরীমনি সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পান। এ সময় নাসির তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালান।’
এজহারে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে অভিনেত্রীর গায়ে ছুড়ে মারা হয়। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করা হয়। এ সময় ৯৯৯-এ কল করতে গেলে পরীমনির মোবাইল ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন এতে নাসিরকে সহায়তা করেন।
পরীমণি তার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পান। রাত ৩টার দিকে তিনি গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় সঙ্গীদের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসেন। আসামিরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছেন। এজাহারে পরীমণি আরও লিখেছেন, অমি পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে বনানীর বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারের পর মাদক আইনের এক মামলায় নাসির ও অমিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
কালের আলো/টিআরকে/এসআইএল