ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রাজধানী, সচেতনতা জরুরি

প্রকাশিতঃ 10:11 am | June 02, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

সম্প্রতি সিলেটে ছয় দফা মৃদু ভূমিকম্প দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজধানীর মানুষ। কারণ এই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে তিলোত্তমা নগরী রাজধানী ঢাকাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই রাজধানীর হাজার হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

আর বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেকোনো সময় ঢাকায় এমন বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

জানা যায়, ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করা হয়। ওই জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা শহরে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তা হলে ৩ লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভবন তাৎক্ষণিকভাবে ধসে পড়বে। একেবারে অক্ষত থাকবে খুব কম সংখ্যক ভবন।

এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তো থেকেই যায়। আর এই দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতিও পর্যাপ্ত নয়।যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত আর্থ অবজারভেটরির গবেষক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা- এ তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।

বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমেছে। একটা হচ্ছে উত্তরপূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে আমাদের পূর্বে চিটাগাং-ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে।

‘দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আমাদের বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে ডাউকি ফল্টে সঙ্কোচনের হার প্রতি একশ বছরে এক মিটার। সেখানে গত ৫শ থেকে ৬শ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে ৫ থেকে ৬ মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে।

এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করি তা হলে তা হবে সাড়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। এখান থেকে ঢাকা শহরের দূরত্ব মাত্র দেড়শ কিলোমিটার। স্বাভাবিকভাবেই তা ঢাকায় কমপক্ষে সাড়ে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করবে। যা এই অপরিকল্পিত শহরকে বিধ্বস্ত করতে যথেষ্ট।’তিনি জানান, ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট এবং চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা।

২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইতিতে ৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আহত হয় আরও তিন লাখ মানুষ। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে।

এদিকে গত ২৯ মে সকাল থেকে ৩০ মে সকাল পর্যন্ত সিলেটে অন্তত ছয়বার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পের উৎস ছিল সিলেটেরই জৈন্তা অঞ্চলে। বাংলাদেশের একটি অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প উৎপত্তি হওয়ার নজিরবিহীন ঘটনায় আতঙ্কিত বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও।

ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সিলেটে হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের মাত্র ছিল ৪.১, ৪, ৩,৩, ২.৮ এবং ২.৮। বারবার এ ধরনের কম্পনের ফলে শুধু সিলেট-ই নয়, আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুরো দেশের মানুষ।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম মাকসুদ কামাল বলেন, এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরে সিলেটের জৈন্তায়। এখানে আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা ও সিলেটসহ পুরো বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তার মতে, ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় রাষ্ট্রের প্রস্তুতি থাকা উচিত। আর কোনো ভবন যেন বিল্ডিং কোড না মেনে করা না হয়- সে বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।

ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ভূমিকম্পের প্রি-শক ও আফটার-শক থাকে। অনেক সময় বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট কম্পন হয়। আবার বড় ভূমিকম্প হলে তারপর ছোট ছোট কম্পন হয়। যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
রাজধানীর অধিকাংশই ভবনই ভূমিকম্প সহনীয় নয়- এমন দাবি করে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় চার লাখের বেশি ভবন আছে। রাজউক-এর আওতায় ভবনের সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এসব ভবনের অধিকাংশই ভবনই ভূমিকম্প সহনীয় নয়।

‘ঢাকার অবকাঠামো যেমন দুর্বল তেমনি রাজধানীবাসীর জনসচেতনতা কম। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা,’ যোগ করেন তিনি।

কালের আলো/এসডিআর/এমএম