বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 2:17 pm | May 29, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত।
শনিবার (২৯ মে) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেমন নিজের দেশকে ভালোবাসি তেমনই যেখানেই নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ আছে তাদের সঙ্গে আছি।
তিনি বলেন, বাঙালিরা যেখানেই যাচ্ছেন, একদিকে যেমন শান্তি রক্ষায় প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। দরদী মন নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটা মনে হয় বাঙালি হিসেবে আমাদের বৈশিষ্ট্য, পরকে আপন করে নেওয়া।
সরকারপ্রধান বলেন, শান্তি মিশনের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির বাইরেও আপনাদের মানবিক দিকগুলোও ফুটে উঠছে। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। এই মানবিক দিকের জন্যই শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশিদের চাহিদা বেশি।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২২টি দেশের ৮০ হাজার ১৮৪ জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে ৬ হাজার ৭৪২ জন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী রয়েছে। এ সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত মোট শান্তিরক্ষীর ৮.৪০ শতাংশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ২৮৪ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৫টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৮টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত আছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুদানে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে মেজর জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা এবং কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও দক্ষিণ সুদানে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর কর্মকর্তা নিযুক্ত রয়েছেন। দক্ষতার কারণে তারা এসব উচ্চ পদ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা ও শান্তির সংস্কৃতি বিনির্মাণে অবদান রেখে চলেছে। সংঘাতপ্রবণ দেশসমূহে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও শান্তি বজায় রাখতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীরা যে মিশনেই গেছেন, সেখানে জাতিসংঘের পতাকাকে সমুন্নত ও উড্ডীন রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করেছেন। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সব শান্তিরক্ষীদের বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের বর্তমান পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামসহ বাংলাদেশের সব শান্তিরক্ষী যাতে আরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে সেজন্য আমাদের সরকারের সব প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববাসীর পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনাদের এ ভূমিকা চিরকাল স্মরণ রাখবে। আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন এ আমাদের প্রত্যাশা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. আজিজ আহমেদ বলেন, শান্তিরক্ষীদের নিজেদের দক্ষতা যোগ্যতা প্রদর্শন করে জীবনের ঝুকি নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের শান্তিরক্ষীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের সরাঞ্জামদি এবং প্রশিক্ষণকে আরও যুগোপযোগী ও আধুনিক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এ আধুনিকায়ন ও সক্ষমতার মূলে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগীতা। ফলে আমাদের শান্তিরক্ষীরা এখন যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।
সেনাপ্রধান বলেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার নানামুখী পদক্ষেপ ও কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এ অসামান্য অবদান রেখে চলেছে তা সর্বজন বিদিত।
‘আমি বাংলাদেশ সরকারের অনন্য অবদানের কথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করছি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, আমাদের সাংবিধানিক শক্তির এবং সরকারের ইতিবাচক পৃষ্টপোষকতা আমাদের শান্তিরক্ষীদের সাফল্য ও অনুপ্রেরণার মূল উৎস।’
এ সময় সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সকল শান্তিরক্ষীদের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান সফল ভাবে আয়োজন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সামরিক বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান।

কালের আলো/এসআরকে/এমএবি