সশস্ত্র বাহিনীকে বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 8:39 pm | November 21, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
যে কোনো আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্য সামনে রেখে সশস্ত্র বাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, জাতির পিতা প্রর্বতিত ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’—এই মূলমন্ত্র দ্বারা আমাদের বৈদেশিক নীতিমালা পরিচালিত। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আমরা বিশ্বাসী। তবে, যে কোনো আগ্রাসী আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা সদাপ্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
‘সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর প্রতিরক্ষানীতি ১৯৭৪-এর আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় সশস্ত্র বাহিনীকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিশেষায়িত সামরিক সজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে।’
শনিবার(২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে দেয়া এক ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২০ উপলক্ষে আমি তিন বাহিনীর প্রতিটি সদস্যসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছর সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাহিনীগুলো নিজেদের মতো করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, আজকের এই মহৎদিনে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে, যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি প্রাণপণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা-কে। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোন-কে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমার সালাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের দিনটি বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যগণ যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেন। সম্মিলিত আক্রমণের মুখে শত্রুবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাঁথা জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে যে সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম হয়েছিল, তা আজ মহীরূহ হয়ে বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা একটি উন্নত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন। সে লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেছিলেন প্রতিরক্ষা নীতি।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি উদ্বোধন করেন। ভারত ও যুগোশ্লভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ করেন। ১৯৭৩ সালে সে সময়ের সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমানসহ হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান এবং এয়ার ডিফেন্স রাডারের মতো অত্যাধুনিক সরঞ্জাম বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীলগ্নে জাতির পিতা প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ‘লক-ডাউন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিবর্গের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে।
‘করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়া দেশি-বিদেশি নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ১৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের করোনা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি মেডিকেল টিম মালদ্বীপে প্রেরণ এবং লেবাননে সংঘটিত ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতীতে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা দেখিয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সশ্রস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সুপরিচিত নাম। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবোই। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখবেন।
কালের আলো/এনএল/এমএইচএ