আগামীতে ক্ষমতায় এলে গ্রামে শহরের সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশিতঃ 9:21 pm | July 14, 2018

সিনিয়র প্রতিবেদক, কালের আলো:
আগামীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এনে প্রতিটি গ্রামে শহর-নগরের সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৪ জুলাই) বিকেলে পাবনা পুলিশ লাইন্স মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সবার কাছে ভোট চেয়ে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
দেশের প্রতিটি গ্রামাঞ্চলকে শহরের ন্যায় উন্নত করার অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাল্লাহ আগামীতে এই বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে আপানারা যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আর আওয়ামী লীগ যদি সরকারে আসতে পারে। প্রত্যেকটা গ্রামের প্রতিটি জনবসতি শহরের মতো নগর সুবিধা পাবে এবং সুন্দরভাবে বাঁচবে। প্রত্যেকটি গ্রামকে আমরা নগরে উন্নত করবো। শহরে উন্নত করব।’
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির উন্নয়ননীতির তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনগণের সম্পদ লুটপাট করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণ করে। ওরা জানে খুন ধ্বংস আর লুটপাট। আর আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য আসি।’
জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯টি ভবনের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলো পাবনাবাসীর জন্য উপহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোট দিয়েছিলেন বলেই আপনাদের উন্নয়ন করতে পারছি। আজকে এতগুলো উপহার এনেছি। সামনে আপনাদের জন্য আরও উপহার আনব।’ এ সময় দেশ শেখ হাসিনা দেশের জনগণের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে জনসভায় কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই টাকা এতিমদের দেননি, তিনি টাকা আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন। আমরা তো তাকে জেলে পাঠাইনি, আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। এতিমদের টাকা মেরে খেলে তো সাজা হবেই।’
জনসভায় আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানতে চাই, আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না? আপনারা হাত তুলে দেখান। আমি আপনাদের অনুরোধ করব। যে ওয়াদা আপনাদের দিয়েছি নিশ্চয়ই তা পূরণ করব। নিশ্চয়ই এই দেশ উন্নত হবে সমৃদ্ধশালী হবে।
আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ। কারও কাছে ভিক্ষা করে চলবো না। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাখো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা বৃথা যেতে পারে না। জাতির পিতা বলেছিলেন, সাত কোটি মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা। আপনাদের দোয়া চাই, আপনাদের আর্শীবাদ চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আজকে আমি সব হারিয়েছি, শুধু আপনাদের জন্য কাজ করতে, মানুষের জন্য কাজ করতে। আমরা বাবা চাইতেন এই বাংলার মানুষ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সুখি-সমৃদ্ধ দেশ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যুব সমাজ, সকলেই তো আর চাকরি পাবে না। কর্মসংস্থান লাগবে। তার জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। বিনা জামানতে তিন লাখ টাকা ঋণ পাবে। এ জন্য কারও দাবি করতে হয় নাই। আওয়ামী লীগ জানে, জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’
অভিভাবক-শিক্ষক-আলেম-ওলামা ও সমাজের সচেতন মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদককের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান করে যাচ্ছি। আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই। সকলের কাছে আমার আবেদন থাকবে। মাদক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটা দেশকে ধ্বংস করে দেয়। আপনারা লক্ষ রাখবেন, আপনার ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে। কেউ যেন এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের দিকে না যায়।’
সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আপনাদের সন্ত্রানরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে। আমাদের কাজ আমরা করব।’
পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমরা আপনাদের জন্য এতগুলো উপহার নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই উন্নয়ন হয়েছে। কারণ নৌকা দেয়। নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার পেয়েছি, নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর সভাপতিত্বে জনসভার আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স।
জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, পারভীন জামান কল্পনসহ জেলা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বেলা ১২টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভা স্থলে আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের প্রচণ্ড তাপ উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১৪ জুলাই) সকালে প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের জন্য পাবনা যান।
এদিন বেলা ১১২টার দিকে পাবনার ইশ্বরদীতে রূপকর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্ধোধন করেন শেখ হাসিনা। এরপর সেখানে এক আলোচনায় সভায় অংশ নেন তিনি। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশনের উপপ্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইএইএ’র পরিচালক মি. দোহী হান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
সকালের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রথমেই প্রয়োজন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। সাধারণ মানুষও সব কিছুর আগে বিদ্যুৎ চাই। আমরা দেশের সকল মানুষের কাছে এবং সব সেক্টরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’
পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো ভয়ভীতি নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন অনেক উন্নত প্রযুক্তি এসে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার পরিকল্পিত সব ব্যবস্থা মেনেই এ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। রাশিয়া ও ভারতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী।’
এ ছাড়া যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাতে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো ক্ষতি না করতে পারে তার সবকটি ব্যবস্থায় আমরা নিচ্ছি বলেও জানান তিনি।
৩৩তম পারমাণবিক শক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে একথা কেউ চিন্তাই করতে পারত না। এর জন্য অনেকগুলো ধারাবাহিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হয়। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেগুলো শুরু করে দিয়েছিল, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সব বাহিনীই সমন্বিতভাবে কাজ করবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পরিকল্পিতভাবেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এখানে রুশ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় রাশিয়া আমাদের পাশে থাকবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাদের পাশের থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। সাধারণ মানুষও সবকিছুর আগে বিদ্যুৎ চান। আমরা দেশের সকল মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেক্টরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি
‘টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জ্বালানি নীতিতে জীবাস্ম জ্বালানির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছি।’
অর্থাৎ তেল, গ্যাস বা কয়লার পাশাপাশি পারমাণবিক, সৌর এবং বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার দুপুরের বিশ্রাম শেষে প্রধানমন্ত্রী ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কালের আলো/ওএইচ