ঘরেই রমজানের ইবাদত-বন্দেগি করার আহ্বান
প্রকাশিতঃ 5:10 pm | April 17, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারনে বাড়ছে সঙ্কট। বাংলাদেশেও দিন দিন বেড়ে চলছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যেই সংক্রমন ঠেকাতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কার্যত লকডাউন চলছে সারাদেশে।
সকল ধরনের শিক্ষা, ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি মসজিদেও মুসল্লির সংখ্যা নির্ধারণ করে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যেই অনেকেই দাবি জানাচ্ছিলেন রমজান মাসে মসজিদ উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। তবে দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতির দিকে না যাওয়া পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।
এই প্রেক্ষিতে মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আসন্ন রমজান মাসে ঘরে বসে ইবাদতের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার(১৬ এপ্রিল) তিনি বলেছেন, সৌদি আরবসহ মুসলিম প্রধান অনেক দেশেই ইতোমধ্যে মসজিদে তারাবির নামাজ স্থগিত করেছে। তাই দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ, আপনারাও তারাবির নামাজ ঘরে পড়ুন। এতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমবে। ঘরে থাকার কারনে ইবাদত করার সুযোগ বেশি তৈরি হয়েছে। এজন্য সবাইকে রমজান মাসে ঘরে বসে ইবাদতের আহ্বান জানাই।
কুরআন নাজিলের পবিত্র মাস রমজান মাস। এ মাসে মুসলিমরা দিনে রোজা ও রাতে তারাবিসহ নানান ইবাদতের মাধ্যমে সময় কাটিয়ে থাকেন। এ মাসে বেঁধে রাখা হয় শয়তানকে। তাই অনেক মুসল্লি দাবি জানিয়েছিলেন মসজিদ খুলে দিতে। নামাজের সাথে যেন জামাতে তারাবি পড়তে পারেন এই জন্যেই তাদের এই দাবি।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার মুসল্লি বুলবুল আহমেদ বলেন, রমজান পবিত্র মাস। এ মাসে আমরা রোজা রাখি এবং মসজিদে ইফতার, তারাবি ও ইতেকাফ করি। মসজিদ বন্ধ থাকলে এটা সম্ভব নয়। দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের রমজানের আগেই মুক্তি দেন এই অবস্থা থেকে।
এ সময় তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, দূরত্ব বজায় রেখে হলেও যাতে আমরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারি সে ব্যবস্থা যেন করা হয়।
তবে বিপরীত কথাও বলছেন মুসল্লিরা। উত্তরার বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম বলেন, আমরা মসজিদের ইমামের কাছে শুনেছি হুজুর (সা:) বলেছেন, মহামারি যে এলাকায় দেখা দেয়, সে এলাকায় কেউ যেন না যায় এবং ওই এলাকার লোক যেন অন্য এলাকায় না যায়। সাথে সাথে এও বলেছেন, যার মধ্যে রোগ আছে সে যেন তার সংক্রমণ না ঘটায়। সুতরাং যদি দেশের পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে আমাদের ঘরে নামাজ পড়াই উত্তম হবে। যেহেতু আমরা ফরজ নামাজ ঘরে পড়ছি তাহলে তারাবি কেন নয়।
ইতোমধ্যেই সৌদি আরব, তুরস্ক এবং জর্ডানসহ অনেক মুসলিম দেশের মসজিদগুলোতে করোনা প্রাদুর্তাবের কারণে তারাবির নামাজ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মসজিদে না এসে প্রত্যেককে বাসায় তারাবি আদায়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রমজানের পূর্বে যদি বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে তারাবির সিদ্ধান্ত কি হবে তা নিয়ে ওলামায়ে কেরাম এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। রমজানের তারাবির বিষয়ে কি নেয়া হবে জামেয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেম ও মুফতিদের নিয়ে একটি বৈঠক রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে রমজানে তারাবি হবেকি হবে না? আমরা বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত মিডিয়ায় পাঠাবো।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। মসজিদের ব্যাপারে বর্তমানে যে আদেশ জারি আছে তাই জারি থাকবে যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়। যেহেতু ফরজ নামাজের জন্য এ সিদ্ধান্ত, সেহেতু তারাবির জন্য আর আলাদা চিন্তার কারণ নেই।
বিষয়টি নিয়ে জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলামের প্রিন্সিপাল এবং দনিয়া বায়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব মুফতি ওযায়ের আমিন বলেন, তারাবি ফরজ নামাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ না। তবে আবেগের দিক থেকে এর গুরুত্বও কম না। যদি স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম ঠিক রেখে বা সরকারের সিদ্ধান্ত ঠিক রেখে সীমিত পরিসরে যদি পড়া যায় তাহলে ভালো হয়। আর ঘদি সরকার অনুমোদন না দেয় তাহলে বাসায় ছোট ছোট জামাত করে পড়তে হবে।
তবে আলেমরা মনে করেন, সবাই নিজের জায়গা থেকে তওবা ইন্তেগফার বেশি বেশি পড়া। যেন আল্লাহ তায়ালা এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তিদান করেন। এবং রমজানের পূর্বে আল্লাহু তায়ালা যেন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেন। সাথে সাথে সবাই যেন আবার এক সাথে হয়ে রমজানের তারাবি এক সাথে পড়তে পারি সে তৌফিক দেন।
কালের আলো/এনএল/এমএইচএ