দেশে কারফিউ জারি হয়নি, সবে শুরু সামনে ভয়াবহ যুদ্ধ

প্রকাশিতঃ 11:02 am | March 29, 2020

পীর হাবিবুর রহমান :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনার বিরুদ্ধে জাতির যুদ্ধ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ যে সব পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে যা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন অনুরোধ করেছেন সেটাই সবার অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সবাইকে এই যুদ্ধে সচেতনতা, সুরক্ষা সবার আগে— তারপর বীরত্ব। এই যুদ্ধে সবাই লড়ছে নিজে বাঁচতে মানুষকে বাঁচাতে। মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই ছিলেন মূল শক্তি, মূল যোদ্ধা। বাকীরা কেউ দেন নেতৃত্ব, কেউ সংগঠিত করে, কেউ অস্ত্র ট্রেনিং দেন আর সবাই দেন সব ধরণের সহযোগিতা।

এবার মূল যোদ্ধা চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, নার্স, চিকিৎসা সহায়তাকারী স্টাফরা। তেমনি কয়েকজন নেতৃত্ব দিতে, কয়েকজন সংগঠিত করতে এবং অনেকে সহযোগিতা দিচ্ছেন। চিকিৎসকদেরই পিপিই থেকে হাসপাতাল, বেড, আইসিউ, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনসহ যাবতীয় সব সহযোগিতার সাথে সুরক্ষা দিতে হবে। কঠিন এ যুদ্ধে মাঠে যারাই নেমেছেন সে সেনা, পুলিশ, র‍্যাব, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী, জনপ্রতিনিধি, সেবামূলক সংস্থা সবাইকেই নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আছেন। থাকবেন। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাসদস্যদের মানুষকে নিয়ে সচেতন সতর্ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার, ওষুধ, খাবার দোকান খোলা রাখতে হবে।

দেশে কারফিউ জারি হয়নি। নিরাপদ থাকতে ও অন্যকে রাখতে মানুষকেও সচেতন সতর্ক হতে হবে। মানুষ অবশ্যই বের হবে তবে দল বেঁধে নয় এবং দুয়ের অধিক নয়। নিরাপদ দূরত্বে সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হতে হবে চলতে হবে। ওষুধের দোকানে যারা বসবেন তারা নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে সচেতন হয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসবেন। যারা ওষুধের দোকানে, কাঁচাবাজারে, খাবার হোটেলে যাবেন হুমড়ি খেয়ে পড়বেন না। নিরাপদ দূরত্ব মেনে যাবেন তবে বাড়াবাড়ি করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এসিল্যান্ড সাইয়েমা মেধাবী ছাত্রী ছিলেন কিন্তু মানবিক সচেতন গণমুখী হননি। পরিবারের মানবিক শিক্ষা, আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির পাঠও নেই। আত্মকেন্দ্রীক ভালো ছাত্রী হওয়া ও ভালো চাকরিই তার জীবনের লক্ষ্য ছিলো। তাই বিসিএসের দম্ভে অমানবিক নির্দয়তা দেখিয়েছেন। এযেনো বিতর্কিত ডিসি সুলতানারই বোন। তাদের শিক্ষা দেখে মনে হচ্ছে বিসিএস প্রশিক্ষকরাও প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। পুলিশকে মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতে বারণ করেছেন আইজিপি। সরকারের মন্ত্রীরাও সাইয়েমার আচরণের নিন্দা করেছেন। এখানে কেউ কারোর ওপর দম্ভ ক্ষমতার বাড়াবাড়ি দেখাবার সুযোগ নেই। জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক। সবাই জনগণের সেবক। মানুষ বের হবে কিন্তু সবাইকে করোনার ভয়াবহতার মুখে স্বাস্থ্য আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। লঙ্ঘন করলে পুলিশও বসে থাকবেনা— লাঠিচার্জ হবে। তবে যত্রতত্র না বের হলেই, দেখলেই লাঠি না। সবারই ঝুঁকি আছে। মানুষকে বুঝতে হবে ভারতে একজনই ৫৯ হাজার জনকে সংক্রমিত করেছে।

এ যুদ্ধ কেবল শুরু। আগামীতে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হবে। ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ার আশঙ্কা সামনে। আকিজ গ্রুপ করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল বানাচ্ছিলো। এতো মহৎ উদ্যোগ রুখে দিলো কমিশনারের নেতৃত্বে সন্ত্রাস। এর আগে উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতাল করোনার চিকিৎসা দেবার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতেই আরেক কমিশনার দলবল নিয়ে হামলে পড়েন। এসব বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে অ্যাকশন দরকার।

মানুষ করোনার উপসর্গ দেখলে যে কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাওয়া ঠিক নয়। যোগাযোগ করে করোনা চিকিৎসা করানোর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে যেতে হবে। হটলাইনে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ফোনে নেয়া যায়। তা নাহলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি।

বৃটেনের রাজপুত্র আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন স্পেনের রাজকন্যা। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আইসোলেশনে। রাশিয়া প্রেসিডেন্টের অফিসেও থাবা। ধর্মযাজক, ইমাম, চিকিৎসক অনেক মারা গেছেন। আমেরিকার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রে করোনার মৃত্যু যন্ত্রণা বিভীষিকাময়। ইউরোপসহ উন্নত দেশে লাশের পাহাড়। আকাশ কাঁপানো আর্তনাদ, লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশনে অসহায় পৃথিবীর দু’শ দেশ ও তার মানুষ। চিকিৎসা নেই। কেবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এরমধ্যে আমাদের দেশ যুদ্ধ শুরু করেছে সবেমাত্র। যুদ্ধের ভয়াবহতা পৃথিবীর মানুষ দেখলেও আমরা দেখিনি। পৃথিবীর অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ের মুখে। উৎপাদন বিপনন সব বন্ধ। আগামীতে কর্মসংস্থানেও আসবে আরেক বিপর্যয়—সে আরেক পর্ব।

এখন জীবন বাঁচানোর লড়াই। গোটা দেশ যেখানে যুদ্ধে সেখানে একদল অমানবিক বিকৃত মানসিক বিকারগ্রস্ত গুজব ছড়িয়ে নোংরা প্রচারে নামে। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার মতোন সাহসী ব্যক্তিত্ববান বিশেষজ্ঞ যেখানে সফল মুখপাত্র সেখানে তার শাড়ির সংখ্যা এতো কেনো? এমন নোংরা প্রশ্ন তুলে কীভাবে? সামর্থ থাকলেও অপরিচ্ছন্ন মানুষ রোজ এক কাপড় পড়ে। কালিজিরা, থানকুনিপাতা গুজবে সাবাড় করে দেয়। নবজাতকের কথা শুনতে পায়। আজান দিয়ে রাতে নেমে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে করোনার বিরুদ্ধে মিছিল করে। গুজব ছড়িয়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে মুনাফা লুটে মুনাফাখোর! অমানুষ এরা। যুদ্ধের ময়দানে মানুষ ও মানবতাবিরোধী অমানুষের দল। শেখ হাসিনা গরিবের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম তার জনপ্রতিনিধিদের জীবাণু ধ্বংসে নামিয়েছেন দেশজুড়ে।

ছাত্রলীগ, ছাত্রইউনিয়নসহ রাজনৈতিক কর্মীরা সেনিটাইজার বিতরণ করছে। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটাচ্ছে। মেয়ররাও বসে নেই। এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি সুরক্ষা রেখে কাজ করছেন। দেশের সবখানে পাড়ামহল্লায় গ্রামগঞ্জে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার দিতে সামর্থ্যবানরা এগিয়ে আসুন। সরকারি বরাদ্দ ঠিক মতোন বন্টন করুন। কে কার, কে কোন দলের দেখবেন না। মানুষ দেখুন মানুষের নূন্যতম প্রয়োজন দেখুন। খাদ্য তুলে দিতে সমাগম করাবেন না। ছবি তোলা, সেলফিবাজিও অমানবিক। লড়াই দেশ ও মানুষের। সবাই মিলে সচেতন হয়ে সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভয়াবহ যুদ্ধ মোকাবেলা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি জনগণের পাশে আছেন এবং মনিটর করছেন বাস্তবিক তিনি তাই করছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ ১০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে সব শিল্পগ্রুপ দেবে। মানুষ মানুষের জন্য এগিয়ে আসবে। এ যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবেই জিততে হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন