মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের শহরে সাকিব-লিটন বন্দনা!

প্রকাশিতঃ 10:07 am | June 18, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলোঃ

সাকিব-লিটনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে যখন জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলছে টাইগাররা সেই সময়টাতেই মুষলধারে বৃষ্টিতে ছন্দপতন বড় পর্দার দর্শকদের! নগরীর সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া এক চিলতে ফাঁকা জায়গাতেই তামিম-মুশফিকদের ম্যাচ হলেই ক্রিকেটপ্রেমীরা বসে যায় সেখানে। 

প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক বিজয়ের পর টানা দুই ম্যাচে হার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বড় পর্দায় তাকিয়ে থাকা মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের শহরের ক্রিকেট ভক্তদের উচ্ছ্বাস থেমে গিয়েছিল। 

ক্যারিবিয়ানদের বিপরীতে সাকিব-লিটনের টর্নেডো ইনিংসে যখন উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ তৈরি হল সেই সময়টাতেই বাগড়া বসালো বেরসিক বৃষ্টি। 

উৎসব-আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার আগেই ফিরতে হলো ঘরে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হলো পরিবার-পরিজনের সঙ্গেই আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। আবার ঘরে বসেই টিভি পর্দায় বিশ্বকাপে সাকিবের টানা দুই সেঞ্চুরি হাঁকানোর জয়ের দিনটিতে বন্ধু-সতীর্থদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের দৃশ্যও চোখে পড়েছে। 

এসব দৃশ্যপট সোমবার (১৭ জুন) রাত সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টার, মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের বেড়ে উঠার শহর ময়মনসিংহের। 

টনটনে ক্যারিবিয়ান গেইল-নিকোলাসদের ঝড়ের পরিবর্তে সাকিব-লিটন প্রলয়ের পর আনসাং হিরো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি’র সেরা ‘চমক’ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের শহরে এখন শুধুই চলছে সাকিব-লিটন বন্দনা। 

প্রাণে প্রাণে মেলাবার সুযোগের দিনে বৃষ্টির হানা উৎসব আনন্দে ভাটা পড়লেও অতি মানবীয় সাকিব ও লিটন দাসের কীর্তির দৌলতেই সেমিতে স্বপ্নের যাত্রাই যেন তাদের ‘দুই দেশি’র শহরে স্টেডিয়ামে বসেই খেলা দেখার আনন্দ এনে দিয়েছে।  

নগরীর বাঘমারা রোড এলাকায় ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির কার্যালয়ে টিভি সেটের সামনে গভীর মনোযোগে লিটনের দ্যুতি ছড়ানো বিশ্বকাপ অভিষেক উপভোগ করেছেন মমিুনুর রহমান প্লাবন, কায়সার ইমাম মেহেদীসহ তরুণের দল। সাকিবের ব্যাটের হাসিতে জয়োৎসবে মেতে উঠেন তাঁরাও। 

এ তরুণরা বলছিলেন, ‘মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক আমাদের শহরের গর্ব। তাঁরা জ্বলে উঠলে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতে গোটা ময়মনসিংহ। আর ইংলিশদের বিপক্ষে ১২১ এর পর উইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ১২৪ রানের হার না মানা ইনিংসও আমাদের আনন্দে উদ্বেল করে। দলের প্রয়োজনেই সাকিবের বারবার ইতিহাস গড়া আমাদের আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’ 

বাংলাদেশের জয় দেখতেই এবং নিজের এলাকার দুই দাপুটে ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেকের ব্যাটিং জাদু দেখতেই নিজের ছোট্ট দোকানটিতে টিভি নিয়ে বসে পড়েন নগরীর সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকার দোকানি ইসলাম উদ্দিন। 

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাকিব-মোসাদ্দেক নিজেদের প্রমাণের সুযোগ না পেলেও ‘টিম স্পিরিট’ টাইগারদের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখায় যারপরেনাই খুশি এ দোকানি। 

ক্রিকেট অন্ত:প্রাণ ইসলাম উদ্দিন খেলার খুঁটিনাটি জানাতে করিৎকর্মা। তিনি বলেন, ‘গ্যাব্রিয়েলের পরপর তিন বলে লিটনের ‘হ্যাট্টিক’ ছক্কা কোনদিন ভুলার নয়। এ স্মৃতি মনে গেঁথে থাকবে অনেকদিন। এ দু’জনের অবিচ্ছন্ন ১৮৯ রানের পার্টনারশিপই রেকর্ড জয় এনে দিয়েছে আমাদের।’ 

মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের শহরে কেবলই যে ক্রিকেট অনুরাগীরাই সাকিব-লিটনের প্রশংসায় মেতেছেন বিষয়টি তেমন নয় মোটেও। এ ধারা থেকে বাদ যাননি তরুণ অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মা হোসনে আরা বেগমও। মুঠোফোনে বলছিলেন সেই কথাই। 

‘সাকিব-তামিম-মুশফিক-লিটনরাও আমার সন্তান। আমি মোসাদ্দেকের ব্যাটিং যেমন পছন্দ করি, ওর জন্য যেমন কায়মনা বাক্যে প্রার্থনা করি ঠিক তেমনি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের প্রতিটি সদস্যই যেন বিশ্বকাপে নিজেদের স্বমহিমায় উপস্থাপন করতে পারে সেই দোয়াই করি প্রতিমুহুর্তে।’ 

তিনি বলেন, ‘মোসাদ্দেক-মাহমুদুল্লাহও ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে ভালো করতো। সামনের দিনগুলোতে ওরাও ভাল করবে, বাংলাদেশের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে উইন্ডিজ আর ক’টা রান করতে পারলে লিটনের সেঞ্চুরি হলে এক ম্যাচে দুই সেঞ্চুরির রেকর্ডও বাংলাদেশের হতো।’ আক্ষেপ নিয়েই যেন কথা শেষ করলেন মোসাদ্দেকের মা।  

কালের আলো/এএ/এএইচ