অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ইডিকে বিশেষজ্ঞদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

প্রকাশিতঃ 5:02 pm | October 07, 2025

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, কালের আলো:

আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও শক্তিশালী ও কঠোর ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক সংলাপে তারা এই পরামর্শ দেন। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার কমিশনার, ৯ জন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন পর্যবেক্ষক অংশ নেন।

তারা বলেন, শুধু আইন ও নির্দেশনা জারি করলেই চলবে না, ইসিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনের পরিবেশ উন্নত করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ইসিকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কেবল শোকজ না করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, কমিশন যদি শুরুতেই শিথিলতা দেখায়, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন হবে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া বলেন, প্রায় ১০ লাখ লোকবলের প্রয়োজন হয় জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য। ইসি-বহির্ভূত সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে দলীয় সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার মনে করেন, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাহী ক্ষমতা এবং ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। যাতে তারা মাঠে সঠিকভাবে আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খানম গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে নির্বাচনে পেশিশক্তির ক্ষমতা, ভোট কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে আসছে, যা রোধ করতে ইসিকে তাদের ‌‘কারিশমা’ এবং স্বচ্ছতা দিয়ে কাজ করতে হবে।

বড় জেলাগুলোতে যেখানে নির্বাচনি এলাকা বেশি, সেখানে একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন খন্দকার মিজানুর রহমান। এতে রিটার্নিং অফিসারদের জন্য তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সহজ হবে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলো :

নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করা। ভোটকেন্দ্র পাহারা কমিটি গঠন, যেখানে স্থানীয় নির্দলীয় বয়স্ক ব্যক্তিরা থাকবেন। কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করা। বিগত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ এড়িয়ে চলা।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের জবাবে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের সবাইকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়— আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম। তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, এদের ওপর নজরদারি রাখা হবে এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন কেবল ইসির দায়িত্ব নয়, এটি একটি জাতীয় দায়িত্ব। তিনি জানান, রাজনৈতিক অভিলাষ আছে এমন কর্মকর্তারা যেন কাজের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষপাতিত্ব না করে, তা ইসি নিশ্চিত করবে।

কালের আলো/এসএকে