পিআর পদ্ধতির পক্ষ-বিপক্ষ

প্রকাশিতঃ 1:40 pm | July 21, 2025

মো.শামসুল আলম খান, কালের আলো:

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পিআর পদ্ধতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে মোটামুটি অনেক দিন। ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর) পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি আবার এই পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। দু’পক্ষই জনমতের দিকে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছে। গত শনিবার শনিবার (১৯ জুলাই) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশে স্মরণকালের বৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে পিআর এর পক্ষে জামায়াত অনড় অবস্থানকে তুলে ধরেছে। প্রয়োজনে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নিজেদের সাত দফা দাবিতেও অগ্রাধিকার পেয়েছে এই দাবিটি। অন্য কয়েকটি দলের নেতারাও পিআর পদ্ধতির কথা বলেছেন। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, নির্বাচনে উচ্চকক্ষে যারা পিআর চায় না তারা ফ্যাসিবাদী হতে চায়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমাদ বলেছেন, নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে।

দল দুটির এমন টানাপোড়েন আর নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে দু’মেরুতে অবস্থান ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিএনপি যেখানে বলছে, যত দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। সেখানে জামায়াত বলছে, যাদের আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে, তাদের বিচার-রাষ্ট্রীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানবে না দেশের জনগণ। দল দুটির শীর্ষ নেতাদের নিয়েও পাল্টাপাল্টি স্লোগান হচ্ছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর বিরোধী বক্তব্য বাড়াচ্ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জাতীয় সমাবেশে নিজেদের পক্ষে লাখো লাখো মানুষের সমর্থন আদায়ে কাক্সিক্ষত টার্গেট পূরণ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও। বিশেষ করে বক্তব্য দিতে গিয়ে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়া আমিরে জামায়াত ডা.শফিকুর রহমানের দৃঢ় মনোবলে অনেক বেশি আশাবাদী দলটির কেন্দ্র থেকে প্রান্ত।

জানা যায়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর আগে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলেও তাতে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তাবকে আমলেই নিতে রাজি নয়। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। একই দাবিতে স্লোগান দেন তারা। সমাবেশে আসা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বক্তব্যে মূলত জামায়াত যে সাত দফা দাবিতে জাতীয় সমাবেশ করে, সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। জামায়াত এক্ষেত্রে মোটাদাগে সফল হয়েছে। পিআর এর পক্ষে বিশাল জাতীয় সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সাফ সাফ বলেই দিয়েছেন, ‘আমাদের প্রিয় শহীদ নেতৃবৃন্দ, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে, শাপলা গণহত্যা, সারাদেশের গণহত্যা, চব্বিশের গণহত্যা যারা করেছে, তাদের সবার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত পুরানো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।’

জামায়াতের জাতীয় সমাবেশের দিনেই ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে’ এই আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আর যাতে চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়’ সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমান বাস্তবতায় দেশের দু’প্রধান দলের অবস্থান পরিস্কার। ফলে নতুন বছরের শুরুতে সম্ভাব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কোন সংকট তৈরি হয় কীনা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে