১০ দিনের রিমান্ডে বাশার, বেরিয়ে আসছে নানা প্রতারণা 

প্রকাশিতঃ 4:39 pm | July 15, 2025

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার। শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার টোপ দিয়ে টাকা হাতানোই ছিল যার পেশা। কয়েক’শ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি।

সোমবার (১৫ জুন) মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে ‘প্রতারক’ বাসারকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে তুলে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। বিচারক ১০ দিনই মঞ্জুর করেছেন।

ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

সিআইডির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবুল কালাম আজাদ এক বার্তায় জানিয়েছেন, ১৪১ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ৪ মে গুলশান থানায় বাশারের বিরুদ্ধে মামলাটি করে সিআইডি।

এদিকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে খায়রুল বাসারের নানা প্রতারণার খবর।

সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধান বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই প্রতারক, তার স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার মিলে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে শুরু করে।

ভুয়া ভিসা প্রসেসিং, মনগড়া প্রতিনিধিত্ব ও চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতো বাশার চক্র। কিন্তু সিআইডি অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছে, শিক্ষার্থীদের অনেকের নামে বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনই করা হয়নি। আবার অনেকে বিদেশে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়েছেন।

এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী বাশার চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগী প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন।

সিআইডি জানায়, খায়রুল বাশার ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন এবং সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করে স্থাবর সম্পদ ক্রয়, ব্যবসা পরিচালনা ও অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করেছেন।

বাশার চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন আইনজীবী জাহিদুল হক খান ও রওনক জাহান। তারা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যেতে চেয়েছিলেন। এ জন্য খায়রুল বাশারের মালিকানাধীন বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ভুক্তভোগী আইনজীবী জাহিদুলের অভিযোগ, কানাডায় দুজনের শিক্ষার্থী ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। তারা প্রতিষ্ঠানটিকে জনপ্রতি ১৭ লাখ করে মোট ৩৪ লাখ টাকা দেন। কিন্তু ভিসার ব্যবস্থা আর হয়নি। ভিসা না পেয়ে তারা টাকা ফেরত চান। তবে টাকা ফেরত দেয়নি বাশারের প্রতিষ্ঠান।

এ ঘটনায় প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাহিদুল-রওনক দম্পতিসহ মোট ১৮ ব্যক্তির পক্ষে গত ৫ মে রাজধানীর গুলশান থানায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির অন্য কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী শরীয়তপুরের আমির হোসেন। থাকেন ঢাকায়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ককে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাকে কানাডার ভিসার ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্তু ভিসার ব্যবস্থা করেনি বাশারের প্রতিষ্ঠান। টাকাও ফেরত দেয়নি।’

এ ঘটনায় গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আমির হোসেনসহ ২৩ জন বাশারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাশার ও তার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। জান্নাতুলের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ভিসায় তাকে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর গুলশান থানা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে বাশারের বিরুদ্ধে অন্তত ১০০ ব্যক্তির মামলার তথ্য জানা গেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব মামলা হয়। এসব মামলায় বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাশারের বিরুদ্ধে গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক মামলা হচ্ছে। অনেক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।’

কালের আলো/এএএন