মাধ্যমিকে পাসের হারে ধসের নেপথ্যে দুই কারণ

প্রকাশিতঃ 5:32 pm | July 12, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:

২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমান (দাখিল ও কারিগরি) পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ কমেছে। ২০০৯ সালের পর এ পরীক্ষার ফল এমন নিচের দিকে দেখা যায়নি। তবে এবার পাসের হারে ধস নামার পেছনে মোটাদাগে দুই রকমের কারণ সামনে আসছে। সাদা চোখে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে এবার পাসের হার অনেকটা কমেছে। আবার বরিশাল ও ময়মনসিংহ বোর্ডের তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, জিপিএ কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। আর পাসের হার গত বছরের চেয়ে কমেছে ১৫ শতাংশ। এছাড়া পরীক্ষায় অংশ নিয়েও পাস করতে পারেনি ৬ লাখ ৬৬০ পরীক্ষার্থী।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যেভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হত, তার বদলে এবার ‘যার যা প্রাপ্য তাই দেওয়ায়’ পাসের হারে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। গত ১৫ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করাটা রেওয়াজের মতো হয়ে গেলেও এবার সেটি হয়নি। পাশাপাশি গত বছরের ৫ আগস্টের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থির পরিবেশ, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকটও ফলাফলে প্রভাব রেখে থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এবারের এই পরিস্থিতিকে ফল বিপর্যয় বলতে নারাজ তত্ত্বাধায়ক সরকারে উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এটাই বর্তমান সময়ের রিয়ালিটি। তবে খারাপ হওয়ার কারণ এবার গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়নি। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। সরকার গঠনের পরও আন্দোলন চলেছে, যে যার মতো করে আন্দোলন করেছে সেটি আরেকটি কারণ। মেয়েদের ফল এবারও ভালো। তার মানে ফলে মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। তাছাড়া যারা খারাপ করতো তারাই খারাপ করেছে।’

চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড়ে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি বছর স্কুলের গণ্ডি পেরোনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যা পাস করা মোট শিক্ষার্থীর ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরে তুলনার এবার গড় পাসের হার কমেছে ১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেছেন, চলতি বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা ‘যথাযথভাবে মূল্যায়ন’ করতে বলা হয়েছিল পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাস করাতে বা ভালো গ্রেড দিতে নম্বর বাড়িয়ে দিতে পরীক্ষকদের বলা হত বলে আমরা বিভিন্ন সময় শুনতে পেতাম। কিন্তু চলতি বছর আমরা পরীক্ষকদের বলেছি, খাতাগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে। শিক্ষার্থীরা খাতায় যা লিখেছেন সে হিসাবেই নম্বর পেয়েছেন।’

বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক জি এম শহীদুল ইসলামের মতে, ‘যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন ও নকল মুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নিতে যথাযথ কেন্দ্র ব্যবস্থপনা’ করায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

দীর্ঘদিন বোর্ডের পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করা সরকারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, ‘আগে পাস করাতে বা ভালো ফলের নিশ্চয়তা দিতে নম্বর একটু বাড়তি দিতে বলা হত। অনানুষ্ঠিকভাবে বোর্ডের কর্তারা এ বিষয়ে বলতেন। যদি এবার তা না হয়, তা পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমার কারণ হতে পারে।’

সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রভাবেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

কালের আলো/এমএএইচএন