নোয়াখালীতে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র
প্রকাশিতঃ 4:27 pm | July 09, 2025

নোয়াখালী প্রতিবেদক, কালের আলো:
নোয়াখালীতে গত তিন দিনের টানা বর্ষণে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০৮ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বৃষ্টির পানি না সরার কারণে জেলাশহর মাইজদির বিভিন্ন রাস্তা ঘাট দেড় থেকে দুই ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার সুবর্নচর, কবিরহাট কোম্পানিগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করার কারণে সুবর্নচর, কবির হাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জামিল আহাম্মেদ জানান, মেঘনা নদীর পানি বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত বিপদ সীমার নীচ দিয়ে প্রবেশ করেছে। হাতিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
টানা বর্ষণে নোয়াখালী জেলা শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, আলফারুক একাডেমী, সার্কিট হাউজ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক ও মাইজদি হাউজিং আবাসিক এলাকার বালুর মাঠ দুই-তিন ফুট পানির নীচে তলিয়ে গেছে।ওইসব এলাকার বসত বাড়িতে পানি প্রবেশ করার কারণে বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
শহরের লক্ষ্মী-নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান জানান, টানা বর্ষণে তাদের এলাকায় হাটু পরিমাণ পানিতে ডুবে রয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে বাসিন্দারা। শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত খাল ও নালাগুলো পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
শহরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে সকাল থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে মোবাইলে চার্জ দেওয়া ও মোটর দিয়ে ভবনে পানি তোলা যাচ্ছে না। দুর্ভোগে পড়েছে বহুতল ভবনের বাসিন্দারা।
নোয়াখালী পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ডুবে যাওয়া সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশনে পৌরসভার কর্মীরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বিগত কয়েক মাস ধরে নালা ও খাল গুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়েছে।
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর শামীম বলেন, গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে উপজেলার মুছাপুর, চরপার্বতী ও চরএলাহি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ছোট ফেনী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সিরাজপুর, চরকাঁকড়া ও চর এলাহি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মাঝে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করা হয়েছে। সিরাজপুর ইউনিয়নে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুদম পুস্প চাকমা বলেন, গত তিনদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ধান শালিক ও ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। ওই দুই ইউনিয়নে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওই সকল আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে গত রাত পর্যন্ত ৮১ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
সুবর্নচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন মোহাম্মদপুর, চরজব্বর, চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ওই সকল ইউনিয়নের নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহাম্মেদ বলেন, টানা বর্ষণে জেলাশহরে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।পৌরসভার ড্রেনগুলোতে ময়লা আবর্জনা ও পলিথিন জমে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ার কারণেই মূলত জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা- গুলোর নিম্নাঞ্চল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে পানি নেমে যাবে।বন্যা ও দূর্যোগ মোকাবিলা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে আজ। সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কালের আলো/এসএকে