জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় রেকর্ডের ছড়াছড়ি, সাঁতারকে অনন্য উচ্চতায় নিতে চান নৌবাহিনী প্রধান
প্রকাশিতঃ 10:47 pm | May 24, 2025

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কালের আলো:
চারদিনব্যাপী ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার প্রথম দিনেই একটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছিলেন মাইশা আক্তার মিম। ২০১২ সালে আনসারের নাজমা খাতুনের গড়া রেকর্ড ভেঙে এবার বিকেএসপি’র মাইশা বালিকা ১৫ থেকে ১৭ বছর বিভাগে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ভেঙেছেন দীর্ঘদিনের সেই রেকর্ড। এজন্য সাকুল্যে সময় নিয়েছেন ১ মিনিট ৭ দশমিক ৫৪ সেকেন্ড। এতে করে নতুন জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারের ইতিহাসে লেখা হয়েছে তাঁর নাম। নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছেন ২০০ মিটার ইন্ডিভিজয়াল মিডলেতে বিকেএসপির জুই আক্তারও। জুই সময় নিয়েছেন ২ মিনিট ৪৮ দশমিক ১ সেকেন্ড। আগের রেকর্ড ছিল বিকেএসপির এ্যানি আক্তারের। এ্যানি সময় নিয়েছিলেন ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড।
মাইশা বা জুঁই এর মতো এবার সাঁতারে ৪টি ও ডাইভিংয়ে ২টিসহ মোট ৬টি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। আঙুল না থাকা কিশোরগঞ্জের নিকলীর যুবক নাদিম মাতিয়েছেন পুল। শিলাইদহ সুইমিং ক্লাবের হয়ে এবারের সাঁতার প্রতিযোগিতায় সবকটি ইভেন্টেই তিনি পদক জিতেছেন। ৪টির মধ্যে ৩টি রুপা ও ১টি ব্রোঞ্জ। সুইমিংপুলে রীতিমতো ঝড় তুলে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন মনির খান তন্ময়। প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই সাঁতারু শুরুতে বললেন ‘সাঁতার অনেক কষ্টের’। পরক্ষণেই বললেন, কষ্টের পথ পাড়ি দিতে চান বড় স্বপ্ন নিয়ে। এই তরুণের চোখে ২০২৬ সালের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) আলো ছড়ানোর আঁকিবুকি। তবে সব ছাপিয়ে এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে বিকেএসপি। তাঁরা জিতেছে ৭০টি স্বর্ণ, ৬২টি রৌপ্য ও ৩২টি ব্রোঞ্জ পদক।
শনিবার (২৪ মে) মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন নৌবাহিনী প্রধান ও বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সভাপতি এডমিরাল এম নাজমুল হাসান। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে সাঁতারকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশাবাদী উচ্চারণ ছিল তাঁর কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, ‘এই প্রতিযোগিতায় এবার ৮০০ এর অধিক ছেলে-মেয়ে অংশগ্রহণ করেছে। আমার বিশ্বাস আমাদের সাঁতারের প্রতি আন্তরিকতা রয়েছে। তোমাদের সবার যে সাঁতারের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, আমরা সবাই মিলে সাঁতারকে বাংলাদেশে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবো। শুধুমাত্র দেশের ভেতরেই নয় আন্তর্জাতিকভাবেও সাঁতারে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে সুইমিং ফেডাশেনের সহ-সভাপতি ও মিয়া ভাই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিয়া ভাই ও সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেই ফেডারেশনকে ঘিরে নিজের স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নিজেদের টিম স্পিরিটকে কাজিয়ে লাগিয়ে সুইমিং ফেডারেশনকে ঢেলে সাজিয়ে দেশের জন্য তিনি নিশ্চিত করতে চান অনন্য সম্মান। এই ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে তিনি সেরা সাঁতারু খুঁজে বের করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ট্যালেন্ট হান্টে বিশেষভাবে নারী সাঁতারুদের খুঁজে আনার প্রয়াস নিয়েছেন। সেরা সাঁতারু কর্মসূচিতে ভবষ্যিতের জন্য ভালো নারী সাঁতারু তুলে আনতে সুচিন্তিত এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতা। যেখানে থেকে বেরিয়ে আসছে কৃতি সব সাঁতারু। ফেডারেশনের এই সভাপতির যুগান্তকারী সব পদক্ষেপেই সাঁতারুদের চোখে এখন নতুন স্বপ্নের বুনন। বিশ^মঞ্চেও নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা।
সুইমিং ফেডারেশন সূত্র জানায়, ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতায় কুষ্টিয়ার শিলাইদাহ সুইমিং ক্লাব ৬টি স্বর্ণ, ৫টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পেয়ে দ্বিতীয় এবং কুষ্টিয়ার আমলা সুইমিং ক্লাব ৬টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্য ও ৪টি ব্রোঞ্জ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে। পুরুষ বিভাগে বিকেএসপির মো. মনির খান তন্ময় (১৮-২০ যুব) ৯টি স্বর্ণ ও ১টি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হয়েছে। তন্ময় একটি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ডও গড়েছে। আর মহিলা বিভাগে বিকেএসপির মোছা. জুই আক্তার (১৮-২০ যুবতী) ৫টি স্বর্ণ পদক পেয়ে সেরা সাঁতারু হয়েছে। জুই ২টি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছে। মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে শনিবার (২৪ মে) প্রতিযোগিতার শেষ দিনে সাঁতারে ২০টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১টি ইভেন্টে নতুন জাতীয় রেকর্ড হয়েছে। ২০০ মিটার ইন্ডিভিজয়াল মিডলেতে বিকেএসপির জুই আক্তার নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ার গৌরব অর্জন করেন। এবার সাঁতারুদের আর্থিক পুরস্কারও প্রদান করা হয়। নতুন জাতীয় রেকর্ড করা সাঁতারুকে পাঁচ হাজার টাকা, স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত সাঁতারুদের দুই হাজার টাকা, রৌপ্য পদক প্রাপ্ত সাঁতারুদের এক হাজার টাকা এবং ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্ত সাঁতারুদের পাঁচশ টাকা দেওয়া হয়েছে।
কালের আলো/এমএএএমকে