প্রবাসী আয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলারের হাতছানি
প্রকাশিতঃ 10:39 am | April 27, 2025

কালের আলো রিপোর্ট:
দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি হচ্ছে প্রবাসী আয়। দেশের বৈদেশিক লেনদেন চলমান রাখছে এই অর্থ। এটি ভূমিকা রাখছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ গঠনেও। রেমিট্যান্সের গতিপ্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যের রসদ জোগাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। সেদিক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রবাসী আয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে দেশ। গত মার্চ মাসে সব রেকর্ড ছাপিয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অর্থপাচার বন্ধের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ছাড়াতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। একই সঙ্গে বেড়েছে রপ্তানি আয়ও। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বাড়ায় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ঘাটতি কমেছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন দমাতে মরিয়া হয়ে ওঠে পতিত সরকার। নির্বিচারে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেন প্রবাসীরা। এতে হঠাৎ কমে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বভার গ্রহণের পর সরকারের আহ্বানে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেন প্রবাসীরা। এরপর থেকেই উর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
এর আগে খোলাবাজার ও ব্যাংক রেটের মধ্যে ব্যবধান থাকায় হুন্ডিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছিলেন প্রবাসীরা। বেশি টাকা পেতে ঝুঁকি থাকলেও অবৈধ পথে তারা পরিবারের জন্য অর্থ পাঠিয়ে আসছিলেন। তবে এখন সেই পথ বন্ধ। একদিকে পাচার থেমেছে, অন্যদিকে রেমিট্যান্সের ডলারে খোলাবাজার ও ব্যাংক রেটের ব্যবধান কমেছে। এখন একই রেটে পাওয়া যাচ্ছে। এতে আর ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন না প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতার কারণে হুন্ডি দৌরাত্ম্যও কমেছে। এসব কারণে বাড়ছে রেমিট্যান্স।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ঈদুল ফিতর ঘিরে মার্চ মাসে রেকর্ড ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ঈদের পরেও রেমিট্যান্সের গতিধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি (এপ্রিল) মাসের প্রথম ২১ দিনেই এসেছে ১৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার ৯৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিদিন আসছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের বেশি বা ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর ৯ মাস ২১ দিনে ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ১০ লাখ ডলার এসেছে। অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাস ২১ দিনে এসেছিল ১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর রেমিট্যান্স বেড়েছে ৫২৮ কোটি ডলার বা ২৯ শতাংশ বেশি।
গত ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে দেশে। এই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ে মার্চ মাসে। এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স আসছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার, ডিসেম্বরে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার, জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ ৩০ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সবশেষ মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘রিজার্ভ ও বিনিময় হার নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। অর্থপাচার বন্ধের কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আবার রপ্তানিও বাড়ছে। সরকার পরিবর্তনের পর রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি না করে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে।’
কালের আলো/এমএসএএকে/এমকে